নাট্যকার সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগ, এবং তাঁর গ্রেফতারির ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের সমাজের কোনও না কোনও ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিটু-র অভিযোগ সামনে আসার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এবার অভিযোগের তীর উঠেছে আট এবং নয়ের দশকের অতি জনপ্রিয় এক বাংলা ব্যান্ডের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে। বেঙ্গালুরু নিবাসী এই খ্যাতনামা গীতিকার, নাট্যকার এবং সাহিত্যিক নিজে এই অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতেই ক্ষমা চান।
১৭ অক্টোবর এক তরুণী জনপ্রিয় ওই বাংলা ব্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে বেশ কিছু বছর আগের এক অভিজ্ঞতা পোস্ট করেন ফেসবুকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তাঁর সঙ্গে চ্যাট করে অশালীন মন্তব্য করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় পোস্টে। দিন দুয়েক আগে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কন্যা দেবলীনা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘটা একই রকমের এক অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এক ইংরেজি দৈনিকে। ১৫ বছর আগে ঘটে যাওয়া এক অভিজ্ঞতা নিয়ে সোচ্চার হন দেবলীনা, এবং তাঁর সেসময়ের আইনি লড়াইয়ের কথাও জানান।
আরও পড়ুন, যৌন হেনস্থার অভিযোগ, শিক্ষক পদে ইস্তফা থিয়েটার শিল্পীর
পারিবারিক ঘনিষ্ঠতার সূত্রে দীর্ঘদিনের আলাপ-পরিচয় থাকা ওই ব্যক্তির দেবলীনার প্রতি 'অশালীন আচরণ'-এর তিক্ত অভিজ্ঞতার ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় হয়ে যাওয়ার পর পরই কলকাতা শহরের আরও এক তরুণী ফেসবুকে পোস্ট করে জানান, তিনি নাবালিকা থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপচারিতা চালিয়ে নিয়মিত তাঁর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি চেয়ে পাঠাতেন ওই খ্যাতনামা সাহিত্যিক-নাট্যকার।
এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, "আমার সঙ্গে যখন ওই ভাষায় অনলাইন চ্যাট হতো, আমি পিডোফেলিয়া শব্দটির সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। এবং ভাবতাম উনি একমাত্র আমাকেই এসব বলছেন। এত বছর পর আমার যে সমস্ত বন্ধুবান্ধব এই ঘটনার কথা জানত, তারা আমায় মুখ খুলতে বলে। আমি পুলিশে অভিযোগ জানাব, বা আদালতে লড়ব, সে সব ভাবিইনি। সমাজে ওঁর যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। আইনি পথে লড়লে ওঁর কীই বা শাস্তি হবে? কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এত মানুষ যে ওঁর এই দিকগুলো সম্পর্কে জানতে পারছেন, ওঁর এত বছর ধরে একটু একটু করে গড়ে তোলা ভাবমূর্তি ধ্বসে পড়ছে, এটাই সবচেয়ে বড় শাস্তি।"
সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা বাড়তে থাকলে মুখ খোলেন তাঁর পুত্র এবং পুত্রবধূ। দু'জনেই মহিলাদের ওই তিক্ত অভিজ্ঞতায় সমবেদনা জানিয়ে লিখেছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়েও এই সময়ে মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোই কর্তব্য বলে মনে করেছেন তাঁরা। এমনকি শ্বশুরের সঙ্গে তাঁর নিজস্ব অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার কথাও লিখেছেন পুত্রবধূ।
ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে দেবলীনা অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তের জেলও হয়। পরে যদিও অভিযোগকারিণী নিজেই আইনি পদক্ষেপ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে দেবলীনা জানিয়েছেন, "আমার সঙ্গে যখন ঘটনাটা ঘটে, তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। তাই আমার সমর্থনে এত জনমত তৈরি করা যায়নি। ওঁর পরিবারের, সমাজের কাছে বার্তাটা পৌঁছনো দরকার, যে ওই ব্যক্তির থেকে সাবধানে থাকো। কারণ শাস্তি দেওয়া শেষ কথা নয়। একটা খুনিও কিন্তু শাস্তি পাওয়ার পরে আবার খুন করতেই পারে। অভিযুক্তের শাস্তি হলো না, সুবিচার হলো না, এই গ্লানি নিয়ে আমি এত বছর কাটিয়েছি। এবং আজকে দেখা যাচ্ছে, আমার সঙ্গে ঘটনাটাই শেষ নয়। সাম্প্রতিক অতীতেও ওই একই ব্যক্তি একই রকম ঘটনা আরও ঘটিয়েছেন। তার মানে উনি সংযত হননি। আমার ঘটনার প্রেক্ষিতে উনি একটি সংবাদপত্রকে বলেছিলেন, আমার কাজ নিয়ে জনসমক্ষে উনি আমায় বকায় আমি এ ধরনের অভিযোগ এনেছি। একজন মহিলার আত্মসম্মান থাকলে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন না। এতে তো মহিলারও সম্মানহানি হয়।"
ঘটনার প্রেক্ষিতে বেঙ্গালুরু নিবাসী ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। বর্তমানে তাঁর ফোন বন্ধ রয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে তাঁকে মেসেজ পাঠানো হলেও এখনও কোনও উত্তর মেলেনি।