Advertisment

বার বার আগুনের গ্রাসে কলকাতার একাধিক বাজার, কিন্তু কেন? পুরভোটের মুখে ঘুরছে প্রশ্ন

কেন বার বার আগুন লাগে? আর আগুন লাগলে তা সহজে আয়ত্তে আনা যায় না কেন? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া পড়ে ঠিকই, কিন্তু ধীরে ধীরে সেই দিনের স্মৃতির ক্রমশই ধূসর হতে থাকে।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
NULL

ঘিঞ্জি এলাকায় চলে ব্যবসা, চলে রমরমিয়ে দোকানদারি, অবাধ প্লাস্টিকের ব্যবহার ! এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

একের পর এক অগ্নিকাণ্ড, কিন্তু তিলোত্তমার বুকে কেন এভাবে বার বার ঘটে যাবে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা? বারবার আগুন লাগার ঘটনায় সামনে এসেছে মহানগরীর অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার বেআব্রু ছবি। আগুন লাগার পর কয়েক সপ্তাহ তুঙ্গে থাকে প্রশাসনিক ব্যস্ততা, তারপর আবার যে কে সেই, আর ঠিক এই কারণেই বারবার ঘটে চলেছে পরপর আগুন লাগার ঘটনা। ঘিঞ্জি এলাকায় চলে ব্যবসা, চলে রমরমিয়ে দোকানদারি, অবাধ প্লাস্টিকের ব্যবহার! সেখানে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা কেমন রয়েছে, তা নজরদারির জন্য পরিকাঠামো নেই। ফলে পরিস্থিতির বদল হয় না।

Advertisment

নন্দরাম মার্কেট, স্টিফেন কোর্ট, আমরি হাসপাতাল, বাগড়ি মার্কেট, সূর্য সেন বাজার- অজস্র উদাহরণ রয়েছে। তালিকায় নতুন সংযোজন বাগবাজারের অগ্নিকাণ্ড। ঘটনার পর হইচই হয়। দিন কয়েক বাদে সব আগের মতো। কেন বার বার আগুন লাগে? আর আগুন লাগলে তা সহজে আয়ত্তে আনা যায় না কেন? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া পড়ে ঠিকই, কিন্তু ধীরে ধীরে সেই দিনের স্মৃতির ক্রমশই ধূসর হতে থাকে। ফলে আবারও সেই পুরনো পদ্ধতিতেই চলে সবকিছুই।

কর্মীর সংখ্যা কম আর নজরদারির অভাবে এই পরিস্থিতি। দমকলে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা কমে গিয়েছে। সেইসঙ্গে শূন্য পদে নিয়োগ হচ্ছে না। এমনই অভিযোগ দমকল বাহিনীর তরফে। আর তার ফলেই কাজে অনেক সমস্যা হচ্ছে। দমকলের নিয়ম অনুসারে নিচু তলা থেকে পদোন্নতি পেয়ে ধাপে ধাপে ওপরে উঠতে হয়। কারণ নিচু স্তরে কাজ না শিখে ওপরের তলায় পদোন্নতি দেওয়া যায় না। ওপরের পদে সরাসরি নিয়োগের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যেহেতু নিচু তলায় অনেক শূন্যপদ, তাই ওপরেরর তলায়ও ফাঁকা রয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে সেভাবে নজরদারী চলে না দমকলের তরফেও।

অন্যদিকে, বিভিন্ন অফিস, বহুতল আবাসনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কেমন, তা খতিয়ে দেখতে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে অডিট করার জন্য তৈরি হয়েছিল আইন। তবে সেই কাজ বিশেষ এগোয়নি। লাল ফিতেয় আটকে গিয়েছে সেই প্রক্রিয়া। অথচ আইন রয়েছে। সেইসঙ্গে বেশ কিছু এলাকায় আবার জলের সমস্যাতেও পড়তে হয় দমকলকেও। ঘিঞ্জি এলাকায় অলিগলি রাস্তায় সংকীর্ণ হওয়ায় দমকলের গাড়ি ঢুকতেও সমস্যা হয়।

publive-image
এমন খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে মিটার বক্স, উদাসীন পুরসভা। এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ

২০০৮ সালের ১১ জানুয়ারি রাতে আগুন লাগে নন্দরাম মার্কেটের পাশের ত্রিপলপট্টিতে। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় নন্দরাম মার্কেট। এর পরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে ২০১৬ সালে ওই মার্কেট ফের খোলার অনুমতি দেয় প্রশাসন। তার আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নতুন করে মার্কেট ভবন তৈরি করা হয়। দমকল দফতরও অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে একাধিক পরামর্শ দেয়। সেই পরামর্শ মেনে কাজ করার পরে তবেই সেই সময়ে ছাড়পত্র পায় নন্দরাম মার্কেট।

তবে তার পর থেকে বছর তিনেক কেটে গেলেও সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেখেও শিক্ষা নেয়নি, নন্দরাম মার্কেট। যার ফল ভুগতে হয় আবারও ২০১৯ এর জুলাইয়ে ফের একবার আগুনের গ্রাসে পড়তে হয় নন্দরাম মার্কেটকে। তিন বছর কেটে গেলেও ফায়ার লাইসেন্স নবীকরণ করা নিয়ে ওই মার্কেটের কেউই আর মাথা ঘামাননি বলে অভিযোগ। শুধু নন্দরাম মার্কেট নয়, বাগড়ি মার্কেটের অবস্থাও অনেকটা সেরকমই।

নন্দরাম মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড থেকেও শিক্ষা নেয়নি বাগড়ি মার্কেট। ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মাঝ রাতে আগুন লাগে বাগড়ি মার্কেটে। যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে মার্কেট কমপ্লেক্সে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় কয়েকশো দোকান। সেই থেকেই বন্ধ হয়ে যায় কলকাতার অন্যতম বড় এই বাজারটি। সম্প্রতি পুরো কমপ্লেক্সটি সংস্কার করা হয়। জোর দেওয়া হয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার উপরও। ফুটপাতের ঘিঞ্জি দোকানের জন্য আগুন নেভাতে কার্যত কালঘাম ছুটে গিয়েছিল দমকলের, এখন সেই সমস্যা কিছুটা দূর হয়েছে।

publive-image
এমনই ঘিঞ্জি এলাকায় চলছে অবাধে কেনা বেচা! এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে খুশি সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথায়,” পুরো বিল্ডিংটার ভোল বদল হয়ে গিয়েছে, ঢেলে সাজানো হয়েছে ভবনটিকে, সেই সঙ্গে ফায়ার সিস্টেমকেও আধুনিকিকরণ করা হয়েছে”। তবে অন্যদিকে নন্দরাম মার্কেট চত্ত্বর ঘুরে যে ছবি ধরা পড়েছে, কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে প্লাস্টিক টাঙানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলছে রমরমিয়ে প্লাস্টিক টাঙিয়ে ব্যবসা, মার্কেটের নীচের সারি সারি ত্রিপল। ৯ তলার ওপর বেশ কয়েকটি ঘরে মজুত রয়েছে প্লাস্টিক সরঞ্জাম। শুধু নন্দরাম বা বাগড়ি নয়, কলকাতার বেশ কয়েকটি মার্কেটের অবস্থা নৈব নৈব চ। কোথাও ইলেকট্রিক তার ঝুলে পড়েছে কোথাও নেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এর মধ্যেই রমরমিয়ে সকাল থেকে রাত প্রাণ হাতে করেই চলছে অবাধ বিকিকিনি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

KMC Elections Kolkata Market Fire
Advertisment