বুধবার নিউ টাউনে সাপুরজি আবাসনে এনকাউণ্টারে দুই গ্যাংস্টার নিহত। রাজ্য পুলিশের এসটিএফ-এর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত ওয়ান্টেড জয়পাল ভুল্লর এবং জশপ্রীত পারমার। এদিন গ্যাংস্টার নিকেশের পর ঘটনাস্থলে র্যাফ নামানো হয়। ডাকা হয় সিআইডি বম্ব স্কোয়াডকে। এলাকা ঘিরে রেখে তল্লাশি অভিযান চালায় তাঁরা। যে ফ্ল্যাটে ওই দুই জন ভারা ছিল, সেখানে কোনও বিস্ফোরক রাখা কিনা? খতিয়ে দেখে বম্ব স্কোয়াড। অন্য কোনও সন্দেহভাজন আবাসনে লুকিয়ে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হয়।
এই এনকাউন্টার প্রসঙ্গে এসটিএফ প্রধান বিনীত গোয়েল বলেন, ’১৫ মে পাঞ্জাবে দুই জন এএসআইকে খুন করে তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। ওদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, খুন, অপহরণ, অস্ত্র পাচারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দেশের একাধিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আমরা বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ ওদের অবস্থান সম্বন্ধে অবগত হই। বিকেল ৩টে নাগাদ অভিযানে নামি। কিন্তু আমাদের দেখেই গুলি চালাতে শুরু করে ওই দুই জন। আমাদের পাল্টা জবাবে মৃত্যু হয়েছে দুই গ্যাংস্টারের।‘
তিনি জানান, ওদের সন্ধানে ১০ লক্ষ টাকা এবং ৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পাঞ্জাব পুলিশ। গোটা অভিযান রাজ্য পুলিশের এসটিএফ করেছে। পাঞ্জাব পুলিশ বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতায় নেমেছে। ময়না তদন্তের পর দুই জনের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পুলিশের ওপর হামলা এবং অস্ত্র পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে সিআইডি।
বিনীত গোয়েল আরও বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত তল্লাসিতে ৭ লক্ষ টাকা নগদ, ৮৯ রাউন্ড গুলি, মোবাইল, ৫টি নাইন এমএম পিস্তল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কতদিন ধরে তারা এই আবাসনে থাকছে, খতিয়ে দেখা হবে।‘ এদিকে, জয়পাল ভুল্লরের অপরাধ ইতিহাস ঘেঁটে জানা গিয়েছে পঞ্জাবের লুধিয়ানায় সরকারি স্পোর্টস ট্রেনিং সেন্টার স্পিড ফান্ড অ্যাকাডেমির প্রতিভাবান ছাত্র ছিল জয়পাল। ওই অ্যাকাডেমিতেই জয়পালের পরিচয় হয় আরও এক খেলোয়াড় হ্যাপির সঙ্গে। হ্যাপি অল্প সময়ের জন্য অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখান থেকেই তাদের ঘনিষ্ঠতা শুরু। এবং এখান থেকেই প্রতিভাবান হ্যামার থ্রোয়ারের কুখ্যাত গ্যাংস্টার হওয়ার সফর শুরু।
সে লুধিয়ানায় সরকারি স্পোর্টস ট্রেনিং সেন্টার স্পিড ফান্ড অ্যাকাডেমির ছাত্র ছিল। অ্যাকাডেমিতেই জয়পালের পরিচয় হয় আরও হ্যাপির সঙ্গে। হ্যাপি পুলিশের খাতায় হিস্ট্রি শিটার ছিল। কিন্তু অ্যাকাডেমিতে তাদের ঘনিষ্ঠতা শুরু। এবং সেই ঘনিষ্ঠতা থেকেই প্রতিভাবান হ্যামার থ্রোয়ার ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে কুখ্যাত গ্যাংস্টার।
২০০৪ সালে অপহরণ দিয়ে হাতে খড়ি হয়েছিল জয়পালের। সে বছর জুলাইয়ে জয়পাল এবং তার শাগরেদ হ্যাপি দু’জনে মিলে লুধিয়ানার এক হল মালিকের ছেলেকে অপহরণ করে। সেই ঘটনায় যদিও গ্রেফতার হয় জয়পাল। জেলে থাকাকালীন তার সঙ্গে পরিচয় বাড়ে অন্য কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের। জেলেই জয়পালের পরিচয় হয় রাজীব ওরফে রাজার সঙ্গে।
ডাকাতির অভিযোগে জেলবন্দি ছিল রাজা। কিন্তু দুই জন মিলে পরিকল্পনা করে এবং তাদের গ্যাংয়ে যোগ করে গ্যাংস্টার শেরা খুব্বানকে। এভাবেই ক্রমে পরিসর বাড়িয়ে পাঞ্জাব এবং এনসিআড় এলাকার ত্রাস হয়ে ওঠে জয়পাল ও তার কোম্পানি। দিল্লি, হরিয়ানা-সহ একাধিক রাজ্যের পুলিশ তাদের গ্রেফতার করলেও বারবার প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছিল তারা।
জানা গিয়েছে, দেশের চার রাজ্য মোট ৪৫টি মামলা এখনও ঝুলে নিহত এই গ্যাংস্টারের বিরুদ্ধে। অপরদিকে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল, এই আবাসনের বি-ব্লকের পাঁচ তলায় লুকিয়ে ছিল এই দুই গ্যাংস্টার। এনকাউন্টার শেষ হতেই ঘটনাস্থলে যান বিধাননগর কমিশনারেটের সিপি সুপ্রতিম সরকার ও এসটিএফ প্রধান বিনীত গোয়েল।
জানা গিয়েছে, খতিয়ে দেখা হবে আবসনের সিসিটিভি ফুটেজ। প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানান, এদিন দুপুরের পর তাঁরা পাঁচ তলা থেকেই গুলির শব্দ পান। ১০-১২ জন পুলিশের লোক আবাসনে ঢুকতেই চলে গুলি। তবে ঠিক কী হয়েছিল? কেউ জানেন না। কারণ সকলেই তখন ঘরে ছিলেন।
ঘটনার সময়ের যে ফুটেজ হাতে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে এসটিএস আধিকারিকরা পুরো আবাসন ঘিরে এই অভিযান চালায়। কয়েকজন পুলিশকর্মীকে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা গিয়েছে।
কমিশনারেট সূত্রে খবর, সিউড়ি থেকে সূত্র মারফৎ খবর আসে বিহার থেকে বাংলায় অস্ত্র-বিস্ফোরক পাচার হওয়ার সম্ভাবনা। সেই খবরের পর তল্লাশি শুরু হতে আটক হয় একটা ট্রাক। সেই ট্রাকের চালক ও অস্ত্র কারবারিকে জেরা করে এই গ্যাংস্টারদের খবর পায় রাজ্য পুলিশের এসটিএফ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকু