বাঙালি মানেই রবীন্দ্রনাথ, বাঙালি মানেই ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, বাঙালি মানেই মাছ-ভাত আর বাঙালি মানেই দুর্গাপুজো। বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো শুধু একটা উৎসব নয়। দুর্গাপুজো আমাদের আবেগ, আমাদের নস্ট্যালজিয়া, আমাদের কৈশোরপ্রেমের সাক্ষী। সারা বছর আমরা অপেক্ষা করে থাকি এই চারটে দিনের জন্যে। শরতের নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ দেখলেই ভুলে যাই রোজকার একঘেয়ে জীবন, আর সাত-সতেরো জটিলতার কথা। মেতে উঠি উমার বাপেরবাড়ি আসার আনন্দে। সেই আনন্দেই ভরা প্রেমের জোয়ার নিয়ে হাজির নিউটাউন সর্বজনীন। আজ কলকাতা প্রেস ক্লাবে লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে ১-এ পা নিউটাউন সর্বজনীন পুজো সমিতির।
দুর্গাপুজো মানেই সার্বজনীনের ডাকের সাজের প্রতিমা। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা, বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা, প্রথম বার মায়ের শাড়ি পরে অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া, ভিড়ের মধ্যে কৈশোরের ভাললাগাকে দেখে আলতো হাসি, বিয়ের পরে সার্বজনীনে সিঁদুর খেলা। টুকরো টুকরো এ রকম কত স্মৃতিতে ভরে আছে কলকাতার পুজোকে ঘিরে! ধর্ম এবং শিল্পকলার অভাবনীয় মেলবন্ধন ঘটে বাংলার এই উৎসবে। ইতিমধ্যেই ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে বাঙালির প্রাণের পুজো দুর্গাপুজো। কলকাতার দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দিয়েছে ইউনেসকো। রাষ্ট্রপুঞ্জের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ তালিকায় নাম জুড়েছে দুর্গাপুজোর। ধর্ম এবং শিল্পকলার অভাবনীয় মেলবন্ধন ঘটে বাংলার এই উৎসবে। হেরিটেজ স্বীকৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে এমনটাই। কোভিড পরবর্তী পুজো নিয়ে বাঙালির উন্মাদনা এই বছর তুঙ্গে। গত দু’বছরে পুজোর আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল।
তবে এবার পুজোর আনন্দকে চেটে পুটে উপভোগ করতে কোন খামতি রাখতে চাইছে না উৎসব মুখর বাঙালি। আর তাতেই নবতম সংযোজন নিউ টাউন সর্বজনীন। নিউটাউনে প্রথমবার বাসিন্দাদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হতে চলেছে এই পুজোর। এমনিতে নিউটাউন জুড়ে ৮৭টি পুজো হলে সর্বজনীন পুজো এতদিন ছিল না। এবারেই প্রথম এমন অভিনব আয়োজন করতে চলেছেন নিউ টাউনবাসীরা। আজ কলকাতা প্রেস ক্লাবে এই পুজোর লোগো উন্মোচন উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, "করোনা আবহে দুবছর পুজোর আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে। মহামারীর পর আবার আমরা একসঙ্গে মিলিত হতে পারবো এটা ভেবেই ভালো লাগছে । এমনিতেই দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির কাছে একটা আবেগ"।
পুজোর প্রথম বছরেই সেরা চমক দর্শকদের উপহার দিতে কোন খামতি রাখতে চাইছেন না পুজো উদ্যোক্তারা। ম্যাডক্স স্কোয়ারের ধাঁচে থাকছে বিশেষ 'আড্ডা জোন'। থাকবে মেলা, ১০০ টির মতো স্টল থাকবে মেলা প্রাঙ্গনে। আজ পুজোর লোগো উন্মোচন করে নিউ টাউন সর্বজনীন পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট উর্মিলা সেন বলেন, “এবার পুজো উপলক্ষে নবরূপে সাজতে চলেছে নিউ টাউন”। আগামী ১৩ জুলাই খুঁটি পুজোর মধ্যে দিয়েই এই পুজোর শুভ সূচনা হবে বলেও জানান তিনি। আজকের এই লোগো বিশেষ ভাবে ডিজাইন করেছেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। তিনি বলেন, 'এতদিন বিভিন্ন কমপ্লেক্সে পুজোর আয়োজন হত। এই বছর সকল নিউটাউন বাসীর পুজো হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে নিউটাউন সর্বজনীন'।
পুজোর এবারের থিম 'নারী শক্তির জাগরণ'। বিশেষ আর্কষণ হিসাবে মহিলা পুরোহিত এবং মহিলা ঢাকি দ্বারা সমগ্র পুজো পরিচালিত হবে বলে খবর। পুজোর উপদেষ্টা কমিটিতে রয়েছেন হিডকোর বর্তমান চেয়ারম্যান তথা কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিম। রয়েছেন দেবাশিস সেন, সত্যম রায় চৌধুরীর মত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। পুজোর থিমের দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী প্রশান্ত পাল। শিল্পী বলেন, 'কলকাতার বড় পুজোগুলিকে অনায়াসেই টেক্কা দেবে নিউটাউন সর্বজনীন। প্রতিমার প্রসঙ্গে তিনি বলেন 'এটাই পুজোর বড় চমক। প্রথম পুজো উপলক্ষে কিছু তো বাড়তি আকর্ষণ থাকবেই দর্শকের জন্য"।
পুজো প্রসঙ্গে নিউ টাউন সর্বজনীন পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট উর্মিলা সেন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের হাত ধরে কলকাতার দুর্গাপুজো এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। আমরা বাংলা কৃষ্টি-সংস্কৃতি’র প্রতি পূর্ণ মর্যাদা রেখে আমাদের এই পুজো আয়োজন করতে চলেছি। এই পুজো ‘বিশ্ব বঙ্গ’ পুজো নামেও পরিচিতি পেতে চলেছে। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের নানান অজানা সংস্কৃতি এই পুজোর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। নিউ টাউন সর্বজনীন পুজো কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা দেবাশিস সেন বলেন, ‘পুজো মানে আবেগ, পুজো মানে মিলন। পুজো মানে প্রাণের উৎসব। আর এই আনন্দের জোয়ারে গা ভাসাতে নিউটাউনবাসীর আবেগের এক অন্যতম সেরা পুজো হতে চলেছে নিউটাউন সর্বজনীন’।