দমদমের পর ফের কলকাতার রাস্তায় মিলল ঐতিহাসিক কামানের খোঁজ। পূর্ব রেলের সদর দফতর ফেয়ারলি প্লেসের পাশে স্ট্র্যান্ড রোডের ধারের ফুটপাথের মাটি খুঁড়ে চলছে কামান উদ্ধার কাজ। বহু বছর ধরে স্ট্র্যান্ড রোডের ফুটপাতে ধারে এই কামানের মুখ বেরিয়ে ছিল। ফেয়ারলি প্লেস কিংবা তার আশেপাশে যাদের নিত্য যাতায়াত তাঁদের অনেকেই এটি দেখেছেন। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল এবং অফিসিয়াল ট্রাস্টির নজরে আসে বিষয়টি। এর পরেই গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় সেই কামান তুলে আনার কাজ। মাঝে কয়েকদিন কিছু সমস্যার জন্যে উদ্ধারকাজ বন্ধ ছিল। এরপর মঙ্গলবার থেকে পুনরায় সেই খনন কাজ শুরু হয়।
কামান খুঁড়ে বের করার সময়ে সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন বন্দুক ও কামান বিশেষজ্ঞ অমিতাভ কারকুন, পুলিশ এবং সিইএসসি-র কর্মীরা। ইতিমধ্যে বেশ অনেকটায় গর্ত খোঁড়ার কাজ হয়ে গিয়েছে। আশা করা হচ্ছে শিগ্রই এটি বের করে নিয়ে আসা হবে। কলকাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক কামান পুনরুদ্ধার করার কাজ চলছে। এসব ঐতিহাসিক কামান এবং যাবতীয় তথ্য সকলের সামনে তুলে ধরতেই রাজ্যে সরকারের সাহায্যে জুডিশিয়াল কামান সংগ্রহশালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্ধার করার পর এসব কামান রাখা হবে এই সংগ্রহশালাতে।
স্ট্র্যান্ড রোডের ফুটপাতে ধারে বহুদিন ধরে উঁকি দিচ্ছিল এই কামানের মুখ। বেশ অনেক বছর ধরেই মাটি থেকে এক ফুটেরও বেশী বেরিয়ে ছিল। দমদমে কামান উদ্ধারের এক মাস যেতে না যেতেই রাজ্য সরকারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টি বিপ্লব রায় ফেয়ারলি প্লেসের এই কামান উদ্ধার করার উদ্যোগ নেন। তিনি এবং কামান বিশেষজ্ঞ অমিতাভ কারকুন এই জায়গা পুরো পরিদর্শন করার পরে খনন কাজ শুরুর সিদ্ধান্তে পৌঁছান। সেই মতন গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শুরু খনন কাজ। মাঝে কয়েকটা দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল ফের কামান উদ্ধারকাজ শুরু হয়। খবর পেয়ে দেখতে সকাল থেকে ভিড় জমে যায় অনেক মানুষের।
গতকাল বিকেলে বিপ্লব রায় নিজে খনন করা গর্তের মধ্যে নেমে কামানের উচ্চতা ফিতে দিয়ে মেপে দেখেন। এরপরে বিপ্লববাবু বলেন, "এই কামানটি দেখে যতটুকু জানা যাচ্ছে ব্রিটিশ আমলের ঢালাই লোহা দিয়ে তৈরি। কামাটি উদ্ধার করার পর ভালোভাবে পরীক্ষা করে পরবর্তী সব তথ্য জানা যাবে। এই কামাটিও মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হবে। সাধারণ মানুষের জন্য প্রদর্শিতও হবে। আমাদের জুডিশিয়াল মিউজিয়াম তৈরির চিন্তাভাবনা অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। আশা খুব তাড়াতাড়ি সুখবর দিতে পারবো।"
প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, ১৭৫০ থেকে ১৭৭৯ সালের মধ্যে এই ধরনের কামান লন্ডনেই তৈরি করা হয়। এরপর বড় বড় জাহাজে করে যুদ্ধের সরঞ্জাম এদেশে নিয়ে আসা হত। কামান বিশেষজ্ঞ অমিতাভ কারকুন বলেন, "ফেয়ারলি প্লেসের এই কামানটি নিয়ে যতটুকু জানা যাচ্ছে তাতে এই কামান ইংরেজদের। দমদমে উদ্ধার করা কামানটি যেমন সৌন্দর্যায়নের জন্যে রাস্তার দুপাশে রাখা হয়েছিল ঠিক উলটোভাবে এই কামানটি রাখা হয়েছিল শহরের সীমারেখা বোঝার জন্যে। সেনাবাহিনী বাতিল করে দেওয়া জিনিস দিয়ে এমন সব কাজ হত সে সময়। এই কামানের উচ্চতা ১০ ফুটের কাছাকাছি বলে মনে হচ্ছে। এর ওজন কত হতে পারে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। কামানটি উদ্ধার করার আরও তথ্য জানা যাবে। আশা করছি এই কামানটির গায়ে ব্রিটিশ ছাপ স্পষ্ট থাকবে। এসপ্ল্যানেড বা ধর্মতলা চত্বর, দমদম, হুগলির শ্রীরামপুর সহ বেশ কিছু জায়গায় অনেক কামান ছড়িয়ে রয়েছে। এই সব কামান বা অস্ত্রশস্ত্র সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরাই ইংরেজ শাসকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল।" সময়ের সঙ্গে ছোট হয়েছে কামানের আকৃতি। দমদমের পরে এটিই এযাবৎকালে পশ্চিমবঙ্গে উদ্ধার হওয়া সবচেয়ে বড় কামান। এর আগে রাজ্যে উদ্ধার হওয়া সর্ববৃহৎ কামানটির দৈর্ঘ্য ছিল ৯ ফুট। সেই কামান কলকাতার টাউন হলে সংরক্ষিত রয়েছে।