জল নেই মাটির নিচে। ভবিষ্যৎ ঢলে পড়ছে জলহীন পৃথিবীর কোলে। হুঁশ ফিরছে না মানুষের। আপাত শিক্ষিত, সচেতন মানুষও দিব্যি খুলে রেখে দিয়েছেন জলের কল। শহর জুড়ে হোর্ডিং-এ ছেয়ে গেছে, 'বন্ধ করুন জল অপচয়'। তবু.. ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে কলের মাথা। দশটা পাঁচটার ব্যস্ত ফুটপাথের কল থেকে অনর্গল বেরিয়ে চলেছে পরিষ্কার পানীয় জল। নজর নেই কারোর। এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা চলছে শিক্ষামহল থেকে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত। কিন্তু সমাধান? দুদিনের পরিকল্পনায় সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন শহরের দুই তরুণ তরুণী।
স্কটিশ চার্জ কলেজে পড়েন ঋক ধর্মপাল ব্যানার্জি। বিষয় পদার্থবিদ্যা। তাঁর বান্ধবী শালিনী মাঝি পড়েন বেথুন কলেজে। হঠাৎ একদিন তাঁদের আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে জল। অকারণে জল অপচয় ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে উৎকণ্ঠা পেয়ে বসে তাঁদের। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সামান্য পদক্ষেপ নিতে পারব না আমরা? বারবার সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে থাকে মাথায়। আলোচনা ও দৃঢ় ভাবনচিন্তার কল্যাণে বের করেও ফেলেন উপায়।
"ভাঙা কলের মাথায় কল লাগিয়ে দেব আমরা।" এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ঋক ও শালিনী। কিন্তু টাকা কোথায় পাব? ভাবনাচিন্তার বাস্তবায়ন করতে অগত্যা নিজেদের বাঁচানো পকেটমানি ভরসা। কত খরচ হবে, এবং কী কল কিনতে হবে, সে বিষয়ে আলোচনা চলে এক মিস্ত্রির সঙ্গে। তাঁর কথামতো বেশ কয়েকটা কল কিনে ফেলেন ঋক-শালিনী। টাকা কম পড়ায় সহপাঠীরা তাঁদের সাহায্য করেছেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন ঋক।
শালিনী তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "অনেকে চুরি হয়ে যাবে বলে ভয়ও দেখিয়েছেন, আবার এও বলেছেন, আমরা যতক্ষণ আছি ততক্ষণ কিছু হবে না। আর আমরা ভেবেছি চুরি হওয়ার আগে অবধিও যতটা জল বাঁচে ততটাই অনেক। ভেবে দেখতে গেলে এ কিছুই না, তবে আমাদের উদ্দেশ্য, যাতে সবাই এগিয়ে আসে এলাকার ছোট ছোট কাজে। সবাই মিলে এমন ছোট ছোট কিছু করলে, হয়ত এখনো নিজেদের বাঁচাতে পারি।"
৬ আগস্ট কলের মিস্ত্রি, প্ল্যাকার্ড এবং শালিনীকে নিয়ে মহাত্মা গান্ধী রোডে পৌঁছে যান ঋক। সারা দিন ধরে চলে কল লাগানোর কাজ। তাঁরা জানিয়েছেন, সম্ভব হলে তাঁদের চোখে যতগুলি ভাঙা কল পড়বে, সেগুলিতে কল বসিয়ে দেবেন। ঋক জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় তাঁরা কল বসাতে গেছেন, সেখানকার কিছু স্থানীয় বাসিন্দা তাঁদের বলেছেন, "পুরসভা থেকে মাপজোক করে দেখেশুনে গেছে, এখনও কল লাগায়নি"। পুরসভা বাধা দেয় নি কাজে? ঋক জানান, "ভবিষ্যতের কথা ভেবে জনস্বার্থে কল বসিয়েছি। এখন অবধি কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি।"
ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে আশীর্বাদ ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন ঋক ও শালিনী। এখন অপেক্ষা আরও বড় রকমের সমর্থনের।