৩১ ডিসেম্বর, কলকাতার এসপ্লানেড থেকে রবীন্দ্র সদন হয়ে ওঠে ‘ উইন্টার ডেস্টিনেশন ‘। এদিন পশ্চিমী পোশাকে সেজে ওঠে শহর ও শহরবাসী। চিরচেনা মিছিল নগরী কলকাতায় ব্যারিকেডের শাসন মেনে পায়ে হেঁটে চেনা পথ ধরে ধীর গতিতে হেঁটে যায় জনতা। আর এতেই নাকি লুকিয়ে আছে মজা!
মনুমেন্ট দেখে মূলত এসপ্ল্যানেড থেকে মেট্রো করে ময়দান। এরপর বাকিটা পথ এগারো নম্বরই ভরসা। তারামণ্ডল, ক্যাথিড্রাল চার্জ হয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। সর্বশেষ গন্তব্যস্থল পার্কস্ট্রিট। এই পথেই বড়দিন থেকে বর্ষশেষে হেঁটে চলে কলকাতা। তবে এ বছর কিছুটা বাগড়া দিয়েছে ‘উইক ডেস’ (মঙ্গলবার)। তবে রাতে সবচেয়ে বেশি ভিড় জমে পার্কস্ট্রিটে। কারণ, কমবেশি সকলেরই জানা আলোর রোশনাইয়ে যেভাবে সেজে ওঠে পার্ক স্ট্রিটের রাস্তা, তার মজা শুধুমাত্র অন্ধকার নেমে এলই উপভোগ্য।
বছরের শেষ দিনে উচ্ছ্বাস পরিক্রমা করতে বেরিয়ে পার্ক স্টিট আসতেই প্রায় খালি হয়ে গেল মেট্রো। স্টেশনে রাস্তায় মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। তাঁদের পথপ্রদর্শকের আসনে বসিয়েই মানুষের ঢল এগিয়ে চলেছে পার্ক স্টিট ক্রসিংয়ের দিকে। এদিন, বিকেল পাঁচটা নাগাদ জ্বলে ওঠে, পার্ক স্ট্রিটের আলো। তখন থেকেই ক্রমশ গাঢ় হতে থাকে ভিড়।
পার্ক স্ট্রিট মোড়ে ৩৫ বছর ধরে আইসক্রিম বিক্রি করছেন আমল পাল। তিনি বললেন, “পার্ক স্ট্রিটে এখন হকারদের কোনো জায়গা নেই। আগে শীতকালে একটানা ব্যবসা করতে পারতাম। তবে আগে এত মানুষকে রাত জেগে রাস্তায় ঘুরতে দেখতাম না। এখন কাতারে কাতারে মানুষ এগিয়ে চলে রাস্তা ধরে। পুলিশ দুপুরে ব্যারিকেড দিয়ে যে রাস্তা তৈরি করে, রাত বারোটা বাজলে তা এদিক ওদিক হয়ে যায়। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার ‘ বলে মারাত্মক জোরে চিৎকার করে সবাই। বাজি পোড়ানো শুরু হয় এই মোড়েই। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে সেই পর্ব। কিন্তু দেড়টা বাজতেই পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে রাস্তা খালি করতে থাকে। লোকজন তখন নতুন বছরের আগমনে এতোই উন্মত্ত থাকে যে, তাঁদের সরাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে”।
সাবেক বার-রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দাররক্ষী বলেন, “এককালে পার্ক স্ট্রিট মানেই হোটেলে এসে খাওয়া-দাওয়া ছিল বাঁধা। কিন্তু এখন তা অনেকটাই ফিকে। মানুষের ঢল বাড়লেও পার্ক স্ট্রিট এসে নামীদামি হোটেলে খাওয়ার সেই ঐতিহ্য আজ চলে গিয়েছে”।
তবে প্রখ্যাত এক রেস্তোরাঁর এক কর্মচারীর কথায় অবশ্য ভিন্ন সুর। তিনি বলেন, “বেলা বারোটা থেকে হোটেলের সামনে লম্বা লাইন পড়েছে। যত রাত বাড়বে, ভিড় পাল্লা দিয়ে বাড়বে। সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে যায় এই দিন”।