সরকারি হাসপাতাল থেকে একের পর এক 'নিখোঁজ' হয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাধীন রোগী। এম আর বাঙুর এবং আর জি কর হাসপাতালের পর এবার এসএসকেএম হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে গিয়ে 'নিখোঁজ' হয়ে গেলেন চিকিৎসাধীন ষাটোর্ধ্ব এক রোগী, নাম খগেন্দ্রনাথ মাইতি। এক ওয়ার্ড বয় তাঁকে নিয়ে যান অ্যানাসথেসিয়া বিভাগে, তার পর থেকেই তাঁর হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি পরিবারের। সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও বিশেষ সুবিধে হয় নি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নিখোঁজই রয়েছেন খগেন্দ্রনাথ।
গত ৯ অগাস্ট এগরার বাসিন্দা খগেন্দ্রনাথকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের কার্জন ওয়ার্ডে। কানের নিচের অংশে টিউমার হয়েছিল তাঁর। সেই টিউমারে অস্ত্রোপচার করানোর জন্য রোগীকে কলকাতায় নিয়ে আসেন ভাইপো নবকিশোর মাইতি। এদিন বিভিন্ন টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালেরই এক কর্মী খগেন্দ্রনাথকে ওয়ার্ড থেকে বের করে নিয়ে যান বলে জানিয়েছেন ভাইপো।
তারপর থেকেই হন্যে হয়ে খুঁজেও কাকার কোনো সন্ধান না পেয়ে ডাক্তার ও নার্সদের জিজ্ঞাসা করেন তিনি। সঠিক উত্তর না দিয়ে বিভিন্নভাবে তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন নবকিশোর। তিনি বলেন, "আমি যখন কাকার খোঁজ করি, তখন এক একজন এক এক রকম উত্তর দেন। কেউ জানেন না কোন ওয়ার্ড বয় নিয়ে গেছেন কাকাকে। শেষমেষ চিৎকার চেঁচামেচি করতে তাঁরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে রাজি হন।"
আরও পড়ুন: ‘ভ্যানিস’ ফোর্থ স্টেজের ক্যান্সার, নজির গড়ল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
ফুটেজে দেখা যায়, অ্যানাসথেসিয়া বিভাগে যাওয়ার পর খগেন্দ্রনাথকে সেখানে আর দেখা যায় না। অন্য আরেক ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালের এক প্রান্তের আউটপোস্টে উপস্থিত কর্মীকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করছেন খগেন্দ্রনাথ। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাতেই এই ঘটনা ঘটেছে, এই মর্মে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন রোগীর পরিবার।
নবকিশোর বলেন, হাসপাতালের সুপার ডাঃ রঘুনাথ মিত্র তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, "কর্মীদের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে আশা করছি খুব তাড়াতাড়িই খোঁজ পাওয়া যাবে খগেন্দ্রনাথবাবুর। আমাদের দিক থেকে যতটা করা সম্ভব, আমরা করছি। সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে ওয়ার্ড বয়ের সঙ্গে গিয়েছিলেন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।" নবকিশোরের বক্তব্য, তিনি যখন তাঁর কাকাকে খোঁজা শুরু করেছিলেন, তখন যদি হাসপাতালের তরফ থেকে তাঁকে বিভ্রান্ত না করে সাহায্য করা হতো, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে উধাও রোগী, প্রশ্নের মুখে আর.জি.কর হাসপাতাল
সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী নিখোঁজের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে জুন মাসে এমআর বাঙুর হাসপাতাল এবং জুলাই মাসে আর জি কর হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যান যথাক্রমে হরিহর নস্কর ও বিক্রম দত্ত। প্রত্যেকবারই পরিবারের অভিযোগ ছিল, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং কর্মীদের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বিক্রম দত্তের ছেলে বলেন, ১১ অগাস্ট রিজেন্ট পার্ক থানা থেকে ফোন আসে, এবং পুলিশ জানায়, ওই এলাকাতেই খুঁজে পাওয়া গেছে তাঁর বাবাকে। কিন্তু কী কারণে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে কিছু মনে করতে পারছেন না বিক্রমবাবু। হরিহর নস্করকেও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া যায় এসএসকেএম হাসপাতালে।