Advertisment

দাতার আকাল, বাংলায় থমকে প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষা

"এটা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাদান। এক্ষেত্রে কাউকে জোর করা যাবে না। তাঁদের চিকিৎসা করা হয়েছে বলে কখনই তাঁরা চুক্তিবদ্ধ নন যে প্লাজমা দিতেই হবে। তবে চিকিৎসার সময় তাঁদের বোঝানো হচ্ছে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
দিনের সেরা প্রযুক্তির খবর: অ্যাপ দেবে রক্তের সন্ধান, ১০ বছরে কী পরিবর্তন সূর্যের?

প্লাজমা থেরাপি করোনা মুক্তির পথ কিনা তা জানা না থাকলেও, এক চিলতে আশার আলো নিশ্চিত। এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মতো বাংলাতেও পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে এ রাজ্যে শুরুই হয়েছে কেবল, এগোচ্ছে না। করোনা আক্রান্তের শরীরে এখনও করোনাজয়ীর প্লাজমা বা রক্তরস প্রয়োগ করার পর্যায় শুরুই করা যায়নি বাংলায়। কারণ, ইচ্ছুক দাতার অভাব। বাংলায় প্লাজমা থেরাপি বিষয়ে পরীক্ষার জন্য ভারপ্রাপ্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ‘ট্রান্সফিউশান’ বিভাগের প্রধান ডাঃ প্রসূন ভট্টাচার্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান, এখনও সপ্তাহখানেকের অপেক্ষা। তাঁর কথায় অনিশ্চয়তা স্পষ্ট। কারণ, প্লাজমা দাতা না পেলে থেরাপির পরবর্তী ধাপের কাজ শুরুই করা যাবে না।

Advertisment

১৯ মে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে প্লাজমা থেরাপি। দু’সপ্তাহ আগে কাজ শুরু হলেও, এখনও পর্যন্ত প্রায় কোনও অগ্রগতিই হয়নি। সূত্র মারফত খবর, আগ্রহী প্লাজমা দাতার সংখ্যা মাত্র দুই হওয়ায় শ্লথ গতিতে এগোচ্ছে গোটা পরীক্ষানিরীক্ষার প্রক্রিয়া।

ডাঃ ভট্টাচার্য বলেন, "এখন পর্যন্ত দু’জন প্লাজমা দিয়েছেন। দু’জনের শরীর থেকে ২০০ মিলিমিটার করে নেওয়া হয়েছে। একজনের শরীর থেকে গৃহীত প্লাজমা দুজনের শরীরে দেওয়া যাবে। প্রক্রিয়া চলছে। আর কম করে সাত জনের শরীর থেকে প্লাজমা পাওয়া গেলেই, প্রয়োগ করা শুরু করব। সোশাল মিডিয়া মারফত অনেকেই জানতে পারছেন, প্লাজমা দেওয়ার বিষয়টি। সংবাদ মাধ্যমেও প্রচার হয়েছে। যদি করোনা মুক্ত রোগী অর্থাৎ দাতারা আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসেন, তাহলে আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই প্লাজমা থেরাপি শুরু করা সম্ভব হবে।"

ডাঃ ভট্টাচার্য প্লাজমা সংগ্রহ করার প্রথম দিনে বলেছিলেন, "করোনা-মুক্ত শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেই অ্যান্টিবডি সবচেয়ে বেশি থাকে রক্তরসে (প্লাজমা) অর্থাৎ রক্তের জলীয় পদার্থের মধ্যে। তাই সুস্থ হয়ে ওঠার ২৮ দিন পর রোগীর দেহ থেকে সংগ্রহ করা হবে প্লাজমা।"

সরকারি হিসাবে এ রাজ্যে বাস করেন ২,৩০৬ করোনাজয়ী। তাহলে কেন এই অবস্থা? রাজ্যে করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করছে যে হাসপাতাল, সেই বেলেঘাটা আইডি-র সুপার আশীষ মান্না বলেন, "করোনা-মুক্ত রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, ছাড়া পাওয়ার পরই তো কেউ প্লাজমা দিতে পারবেন না। কোয়ারান্টিন পিরিয়ড শেষ হলে নির্দিষ্ট সময়ের পর দিতে পারবেন। এটা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাদান। এক্ষেত্রে কাউকে জোর করা যাবে না। তাঁদের চিকিৎসা করা হয়েছে বলে কখনই তাঁরা চুক্তিবদ্ধ নন যে প্লাজমা দিতেই হবে। তবে চিকিৎসার সময় তাঁদের বোঝানো হচ্ছে। তাঁরা রাজি হলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।"

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির প্রধান তথা চিকিৎসক নির্মল মাঝি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "ধাপে ধাপে দেড়শোর বেশি করোনামুক্ত রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। এঁদের সকলের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁদের প্লাজমা দেওয়ার বিষয়ে বুঝিয়েছি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে সকল বয়স্ক মানুষ মৃত্যর সঙ্গে লড়ছেন, তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। সুস্থদের মধ্যে তরুণ প্রজন্ম যাঁরা, তাঁদের অনেকেই প্লাজমা দিতে রাজি হয়েছেন। আগামীদিনে তাঁরা প্লাজমা দিতে আসবেন, সে বিষয়ে সানন্দে আগ্রহ দেখিয়েছেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অন্তত ১৮ জন এই মুহূর্তে রাজি আছেন বলে জানতে পেরেছি।"

হাসপাতাল সূত্রে খবর, আগ্রহী দাতারা যদি না এগিয়ে আসেন, তাহলে করোনা চিকিৎসায় যে ক্ষীণ আশা দেখাচ্ছে প্লাজমা থেরাপি, তার সফল পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়ে উঠবে না। প্রসঙ্গত, প্লাজমা দাতা নির্বাচনে বেশ কিছু পরীক্ষা রয়েছে। সেই পরীক্ষার পর যদি দেখা যায়, দাতারা সক্ষম এবং পরীক্ষার ফলাফল সঠিক, তাহলেই প্লাজমা গ্রহণ করা হবে। এই রক্তরস যন্ত্র মারফত সংগ্রহ করা হবে। মেশিনে রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা হয়ে যায়। সেই রক্ত পুনরায় রোগীর শরীরে ফিরে যাবে। ফলে দাতার শরীরে রক্তের অভাব হওয়ার সম্ভবনা নেই। বরং জল খেলেই সেই শূন্যতা পূরণ হয়ে যাবে।

সাধারণত রক্ত দিতে যদি দশ মিনিট সময় লাগে, তবে এ ক্ষেত্রে সময় লাগছে ঘণ্টাখানেক। অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা করোনায় আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীকেও করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে, এমনটাই আশা। পূর্ত দফতর এর আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্রিন বিল্ডিং-এ ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লাজমা গ্রহণের জন্য নতুন ওয়ার্ড নির্দিষ্ট করে দেয়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

covid COVID-19
Advertisment