Gariahat Double Murder: গড়িয়াহাট জোড়া হত্যাকাণ্ডের কিনারা করল কলকাতা পুলিশ। গ্রেফতার মিঠু হালদার নামে এক মহিলা। বুধবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করেছে হোমিসাইড শাখা। মূলত ছেলের কুুকীর্তি আড়াল করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। পরিচারিকার কাজ করতেন মিঠু। সুবীর চাকি এবং তার ড্রাইভারকে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মিঠুর বড় ছেলে। লুঠের উদ্দেশে বাড়ি ঢুকে সুবীরবাবুর নজরে পড়ে ওই যুবক। তারপরেই খুন করা হয় সুবীরবাবুকে। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে খুন হতে হয় তাঁর চালককে।
এরপর বাড়ি গিয়ে মাকে কুকর্মের কথা জানায় অভিযুক্ত। খুনের সঙ্গে জড়িত সব তথ্য-প্রমাণ লোপাটে সাহায্য করে মিঠু। তাকে সাহায্য করেন তিন জন। পুলিশ সেই তিন জনকেও গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনায় মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই ঘটনার দুই দিন পর্যন্ত অথৈ জলে ছিল লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। কিন্তু গড়িয়াহাট জোড়া হত্যাকাণ্ডের ৭২ ঘণ্টায় মাথায় আটক হয়েছিল এক। জানা গিয়েছে, মিঠু হালদার নামে ওই পরিচারিকাকে আটক করে ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ। এই মিঠু পরিচারিকার কাজ করেন। কর্মসূত্রে একটা দীর্ঘ সময় সুবীরবাবু বাইরে থাকতেন। সেই সময় তাঁর মায়ের দেখাশোনা করতেন মিঠু। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এই মহিলার অপরাধের পুরনো ইতিহাস রয়েছে। শুধু তাই নয় এই তদন্তে সন্দেহজনক চরিত্র হিসেবে উঠে এসেছে মিঠুর ছেলের নাম। তিনিও জমি-বাড়ির দালালি করেন। ঘটনাচক্রে সুবীরবাবুর কাকুলিয়া রোডের বাড়ি বিক্রির উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মিঠুর ছেলে। তাই সেই পরিচারিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর ছেলের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ। মঙ্গলবার পুলিশের স্নিফার ডগ বালিগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে।
সেই থেকে গোয়েন্দাদের মনে সন্দেহ হয়, সম্ভবত বালিগঞ্জ থেকে ট্রেন ধরে অপরাধের পর চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এমনকি, সন্দেহভাজন মিঠুর বাড়ি ডায়মন্ড হারবারে হওয়ায়, তিনিও শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেন ধরে যাতায়াত করতেন। সেই সুত্র ধরেই তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সম্পত্তিগত বিবাদ কিংবা বাড়ি হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এই খুন কিনা? প্রথম থেকেই খতিয়ে দেখছিলেন গোয়েন্দারা। এবার গড়িয়াহাটের কাকুলিয়া রোডের বাড়ি বিক্রির সঙ্গে যুক্ত দালালদের ডেকে পাঠাচ্ছে পুলিশ। তাঁদের তালিকায় তিন দালালের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের মধ্যে একজন গড়িয়াহাট এলাকার, বাকি দুই জন সল্টলেকের। তাঁদের জেরা করে রহস্যের জট ছাড়াতে মরিয়া পুলিশ।
তবে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ নিশ্চিত ঘটনার দিন সুবীরবাবু এবং ড্রাইভার রবীনের সঙ্গে একের অধিক ব্যক্তি ওই বহুতলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা কারা, সেই ধন্ধে এখন ঘুরছে পুলিশের তদন্ত। এদিকে পুলিশ জানতে পেরেছে রবিবার বিকেলের দিকে গরিয়াহাটের এক পরিচিত মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি নিয়েছিলেন সুবীর চাকি। তিনটি বাক্সে সেই মিষ্টি ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল।
কাকুলিয়া রোডের বাড়িতে আগত অতিথিদের জন্য সেই মিষ্টি, না বাড়ি ফেরার পথে অন্য কোথাও সুবীরবাবুর বিজয়া সারার পরিকল্পনা ছিল? এটাই জানতে চাইছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের একটি সুত্র বলেছে, বাড়ি বিক্রির কাজে গড়িয়াহাট গেলে স্ত্রীকে কিংবা মা-কে জানাতেন সুবীর চাকি। সেদিনও একইভাবে গড়িয়াহাট এসেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বাড়ির নথি।
পুলিশের অন্দরে প্রশ্ন, বাড়ি বিক্রি উপলক্ষ্য হলে, গাড়িতে কেন ছিল বাড়ির নথি? একইভাবে ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা এক মহিলার সুত্র খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাতে পারে লালবাজার। যদিও ঘটনার পর থেকে সেই মহিলার মোবাইল বন্ধ। যা আরও সন্দেহ দানা বাঁধিয়েছে গোয়েন্দাদের মনে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন