Advertisment

'সবই টালা ব্রিজের দয়া, নয় টাকায় কলকাতা ঘুরছি'!

গন্তব্যে পৌঁছাতে রোজ যা সময় লাগত, এখন সেই রাস্তা পার করতেই সময় লাগছে তার তিন গুন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এক ঘণ্টা আগে বেরিয়েও লাভ হল না বনহুগলীর অরিত্রিক দত্তের। এদিকে ডানলপ থেকে নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশন রুটে অটোর অপেক্ষায় যাত্রীর লম্বা লাইন। বেলা এগারোটার সময় ৭৮/১ বাসে বসে শ্যামল চৌধুরি বলে উঠলেন "সবই টালা ব্রিজের দয়া, নয় টাকায় শহর ঘুরছি"। বিরক্ত মুখে সামনের সিটে বসে থাকা মাঝবয়সী ভদ্র মহিলা বললেন, "পুজোয় আর ঠাকুর দেখার নাম করব না, শহরের যা হাল"। গন্তব্যে পৌঁছাতে রোজ যা সময় লাগত, এখন সেই রাস্তা পার করতেই সময় লাগছে তার তিন গুন। সপ্তাহে শুরু থেকে যান যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ উত্তর ২৪ পরগণার অসংখ্য নিত্যযাত্রী। আর এসেবর নেপথ্যে টালা ব্রিজে বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা।

Advertisment

publive-image যাটজটের কবলে শহরবাসী, ছবি: শশী ঘোষ

আরও পড়ুন: টালা ব্রিজের যানজট এড়াতে বিশেষ ট্রেন চালাবে পূর্ব রেল

পরিস্থিতি এমনই যে সোমবার রাস্তায় বাস নামানোর পরই ডানলপ থেকে ধর্মতলা রুটের ৩৪বি বাস চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে মালিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস চালক বলেন, "পয়সা দিয়ে চলছে রুট কেনাবেচা। ৩৪বি বাসকে চিড়িয়া মোড় হয়ে নাগেরবাজারের পর এয়ারপোর্ট দিয়ে বাগুইহাটি হয়ে ঘোরানোর কথা বলা হয় ট্রাফিক থেকে। কিন্তু সেদিকে আমাদের কোনো যাত্রীই নেই, ভাড়াও হবে না। তাই বাধ্য হয়েছি বন্ধ করতে"। বাস বসে যাওয়ায় পুজোর আগে রুটিরুজি বন্ধ হতে চলেছে বলে রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন তিনি। আরেক চালকও আক্ষেপ করে বলছেন, 'জানি না, কবে খুলবে টালা ব্রিজ'। শুধু ৩৪বি নয়, সল্টলেকগামী ২০১ বাসের পরিষেবাও প্রায় নেই বললেই চলে। মঙ্গলবার সকালে চিড়িয়া মোড় পর্যন্ত এই বাস যাচ্ছিল। তবে সে খবর জানতেন না যাত্রীরা। রাস্তার মাঝে যাত্রীদের হঠাৎই নেমে যেতে বলায় চালকের-কন্ডাকটরের সঙ্গে গোলমাল বেধে যায় যাত্রীদের। বাস চালক জানান, 'আমারও কিছু করার নেই। ট্রাফিকের সঙ্গে কথা বলুন'। অন্যদিকে, ২৩০ নম্বর রুটেও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বাস সংখ্যা। অনেক কম গাড়ি এদিন রাস্তায় নামায় দমদম নাগের বাজার চত্বরে সোমবারের মতো যানযট চোখে পড়েনি। তবে বেলগাছিয়া মোড় থেকে শ্যামবাজারের মধ্যে গাড়ির গতি অত্যন্ত শ্লথ থেকেছে মঙ্গলবার।

আরও পড়ুন: জন্মের আগেই জন্ম! বিরল চিকিৎসায় সুস্থ বাংলার ঋদ্ধিস্মিত

২৩৪ নম্বর বাসের চালক বলেন, "বেলঘরিয়া থেকে গল্ফগ্রিন পৌঁছাতে সোমবার আট ঘণ্টা সময় লেগেছে। শুধু তাই নয়, দিনের তেল খরচ যদি চার হাজার টাকা হয়, সেখানে এখন লাগছে ছয় হাজার টাকা। সে কারণেই আজ অনেক গাড়ি বের করতে দেয়নি মালিকরা"। ৭৮/১ এর কন্ডাক্টর অজিত মল্লিক বলেন, "বাসের ভাড়া বারানোর কথা উঠছে, এখন দেখা যাক কী হয়?"

উল্লেখ্য, পুজোতে বন্ধ রাখতে হচ্ছে টালা ব্রিজ, পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত মতই চলবে শুধু ছোট গাড়ি, বাস এবং লরি চলাচলে জারি থাকছে নিষেধাজ্ঞা, মঙ্গলবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে একথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর পরে ১২ অক্টোবর টালা ব্রিজ নিয়ে ফের আরেক প্রস্থ বৈঠকের কথাও এদিন ঘোষণা করেন তিনি। আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পূর্তমন্ত্রী, পুরমন্ত্রী সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা। এছাড়া রেলের আধিকারিকদেরও ডাকা হয়েছিল এই বৈঠকে। এদিন মূলত সমাধান সূত্র নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। টালা ব্রিজে বাস লরি বন্ধ রাখার সোমবারই যানজটে তুমুল নাকাল হয়েছে কলকাতার উত্তর প্রান্ত। এরপরই পুজো পর্যন্ত ব্রিজের ওপর দিয়ে বাস চালানো যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করছিল প্রশাসন। কিন্তু নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শেষ পর্যন্ত কেবল ছোট গাড়ি চলাচলের সিদ্ধান্তে অনড় থাকল রাজ্য সরকার।

উৎসবের মরশুমে টালা ব্রিজে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন ট্রাফিক নিয়ে নাজেহাল অবস্থা, তেমনি বিপাকে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। ইতিমধ্যে ভিড় সামলাতে নোয়াপাড়া-কবি সুভাষ পর্যন্ত অতিরিক্ত ১৪ টি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

kolkata news kolkata kolkata metro
Advertisment