"আমরা সবাই ইন্ডিয়ান"। নাম জানতে চাইলে, এই একটাই জবাব। যাঁরই নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে, তিনিই বলছেন, 'আমি ইন্ডিয়ান'। আবার কেউ কেউ নাম বলবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়েই দিচ্ছেন। বরং নাম জিজ্ঞাসা করা হলে চাইছেন কৈফিয়তও। শুক্রবার ধর্নার এগারোতম দিনে এমনটাই ছবি পার্ক সার্কাসে। দিনরাত এক করে চলছে স্লোগান। সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর বন্ধ করার দাবিতে অনির্দিষ্টকাল এই আন্দোলন চলবে বলে দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন আয়োজকরা।
শিশু কোলে আন্দোলনের মঞ্চে। ছবি- শশী ঘোষ
৭ জানুয়ারি মুসলিম মহিলারা পার্কসার্কাসে ধরনা-অবস্থানে বসেন। প্রথমে ৬০ জন এই আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর সেই সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে, কনকনে ঠান্ডাকে অগ্রাহ্য করে আন্দোলনে সামিল থাকেন অগণিত মানুষ। পার্ক সার্কাস ময়দানে এখন হাজার হাজার মানুষ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে পরিবারের কচিকাঁচারাও। তারাও আজ নাগরিকত্বের দাবিতে পরিবারের বড়দের সঙ্গ দিচ্ছে।
ছবি- শশী ঘোষ
নাম জিজ্ঞাসা করলেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। এমনকী অন্যদের জিজ্ঞেস করছেন নাম কেন জানতে চাওয়া হচ্ছে। নথি দেখাবেন না বলে নামও বলবেন না, বলে পণ করেছেন আন্দোলনকারীরা। পাছে অন্য কোনও ফন্দি থাকে! তবে অনেকে আবার একযোগে বলে উঠলেন, :আমাদের একটাই নাম, 'ইন্ডিয়ান। আমরা ভারতীয়।"
আরও পড়ুন: ‘ভাইপোর স্ত্রীর পদবী জানি না, জানতেও চাই না’
তাঁদের বক্তব্য, "আমাদের নাগরিকত্ব হরণ করতে দেব না। যত দিন না নয়া নাগরিকত্ব আইন তুলে নেওয়া হচ্ছে, আমাদের আন্দোলন চলবেই। আমরা এতদিন বৃষ্টিতে ভিজে, রাতের হাড়হিম করা ঠান্ডাতেও এই মঞ্চ ছেড়ে যাইনি। বাড়ির ছোটদের স্কুলে নিয়ে যেতে পারছি না। সবার আগে নাগরিকত্বের অধিকার চাই।"
রাতের ঠান্ডাও দমাতে পারছে না অবস্থানকারীদের।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ওই আন্দোলনে হাজির হয়েছেন। কিন্তু কোনওভাবেই এই মঞ্চকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবেই এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান তাঁরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, "সাধারণ মানুষ এখানে অবস্থান আন্দোলন করছে। রাজনীতির বিন্দুমাত্র ছোঁয়া নেই। লাগাতার অবস্থান, ধরনা চলবে বলেও জানিয়ে দিলেন তাঁরা। "এতদিন আমাদের একটা ত্রিপল খাটানোর অনুমতি ছিল না। অবশেষে অবশ্য ত্রিপল টাঙানোর অনুমতি দিয়েছে কলকাতা পৌরসংস্থা," জানালেন এক আন্দোলনকারী।