আমফানের পরে ছ'টা দিন অতিক্রান্ত। কিন্তু, কলকাতা সব জায়গায় এখনও আঁধার ঘোচেনি। ফের কবে আলো জ্বলবে, কবে জল আসবে তা এখনও জানেন না শহর, শহরতলির বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, ঘূর্ণিঝড় ধ্বস্ত ৮০ শতাংশ এলাকায় অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা সচল হয়ে গিয়েছে। বাস্তবে অবশ্য ভিন্ন ছবি ধরা পড়েছে। বেলা বাড়তেই বিদ্যুৎ, জলের দাবিতে পথ অবরোধ, বিক্ষোভ শুরু হয় বেহালা, যাদবপুর, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, সন্তোষপুর, সাঁপুইপাড়া-সহ বেশ কিছু জায়গায়।
এই পরিস্থিতির জন্য সিইএসই-কেই দায়ী করেছিলেন কলকাতা পুরনিগমের প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। 'মানুষের বিক্ষোভ মূলত জল ও আলো না-থাকার কারণেই। এর জন্য সিইএসসি-ই দায়ী। এনাফ ইজ এনাফ।' পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংস্থাকে বাড়তি কর্মী নিয়োগের পরামর্শ দেন ফিরহাদ হাকিম।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার ফিরহাদ হাকিম সাফ জাননিয়েছিন যে, 'কলকাতার বিদ্যুৎ পরিষেবার ব্যর্থতার দায় সরকারের নয়।' বলেন, 'গাছ না কাটার জন্য লাইন দেওয়া যাচ্ছে না, সিইএসসি-র এই দাবি ভুল। বরং কয়েকটি জায়গায় ওদের লাইন চালু থাকায় গাছ কাটা যায়নি।'
পুরসভা ও সিইএসসি-র এই টানাপোড়েনের মাঝে বেহালার শীলপাড়ার বাসিন্দার কথায়, এ দিন সেনাবাহিনী গাছ কেটে দিলেও, সিইএসসি কর্মীরা কখন আসবে, সে সম্পর্কে সারা দিনেও কোনও তথ্য মেলেনি। তবে রাত পর্যন্ত সার্ভে পার্ক, নাকতলা, যাদবপুর, রিজেন্ট এস্টেট, পর্ণশ্রী এলাকার এক অংশে মেরামতির কাজে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গিয়েছে সিইএসসি কর্মীদের।
সিইএসসি-র দাবি, তাঁদের পরিষেবা এলাকায় ৯০ শতাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ চলে এসেছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গায় কর্মী সংখ্যা বাড়িয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে। জেনারেটর দিয়ে পরিষেবা সচল রাখা হয়েছে। সিইএসি-র যুক্তি, ঝড়ে গাছ পড়ে, তাদের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোয় যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত সামলানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলিতে গ্রাহকদের ঘরে সাময়িক ভাবে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রাহকদের বড় অংশ অবশ্য তার প্রমাণ পাননি।
এই পরিস্থিতির জন্য অবশ্য রাজ্য সরকার ও পুরসভাকেই দায়ী করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, 'গাছ, আলোর পোস্ট পড়ে গিয়ে শহরের একাধিক রাস্তা এখনও বন্ধ। ঘটনার ৬ দিন পরেও তা সরানো গেল না। বিদ্যুৎ নেই। মানুষের হয়রানির শেষ নেই। আমি নিজে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ভেঙে পড়া গাছ সরাচ্ছি।' এরপরই তাঁর সংযোজন, 'বিদ্যুৎ নিয়ে যা হল তা থেকে রাজ্য দায় ঝেড়ে ফেলছে। ঝড়ের পর কীভাবে সামাল দেওয়া হবে তা আগে থেকে কেন ঠিক করা হয়নি? রাজ্য, পুনিগম ও সিইএসসি একে অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলছে। মানুষের অসুবিধা লাঘবের কোনও উদ্যোগ নেই।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন