সপ্তাহখানেক আগেই দেশের সব শহরের মধ্যে করোনার ‘পজ়িটিভিটি রেট’-এ শীর্ষে ছিল কলকাতা (৩২.৩৫ শতাংশ)। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও লাগামছাড়া মৃত্যু এখনও কপালে চিন্তার ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। এসবের মধ্যেও আবারও পিছিয়ে পড়েছে মহানগরী। ১৫-১৮ বছর বয়সি স্কুলপড়ুয়াদের করোনা প্রতিষেধক দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত খারাপ ফল সামনে এসেছে।
প্রতিষেধক দেওয়ার হারে অন্য প্রায় সব জেলার থেকে পিছিয়ে পড়েছে এই শহর। রাজ্যে ১৫-১৮ বছর বয়সিদের প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে গত ৩ জানুয়ারি। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, সেই দিন থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষেধক প্রাপ্তির হারে সব চেয়ে খারাপ ফল করা জেলাগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা। এখানে ১৫-১৮ বছরের পড়ুয়াদের মাত্র ৩৬ শতাংশ এখনও পর্যন্ত প্রতিষেধক পেয়েছে।
খারাপ ফলের শীর্ষে রয়েছে পশ্চিম বর্ধমান। সেখানে প্রতিষেধক প্রাপকের হার মোটে ২৮ শতাংশ। অন্য দিকে, কলকাতার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে ওই বয়সিদের ৪১ শতাংশ প্রতিষেধক পেয়েছে। কলকাতাকে পিছনে ফেলে অনেক এগিয়ে গেছে বাঁকুড়া, নন্দীগ্রাম, আলিপুরদুয়ার, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ কার্যত প্রায় সব জেলা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১৫-১৮ বছর বয়সি পড়ুয়াদের ৫৩ শতাংশ প্রতিষেধক পেয়েছে। অনেক জেলায় সেই সংখ্যা ৬৫-৭৩ শতাংশ। কলকাতা দিতে পেরেছে মাত্র ৩৬ শতাংশকে!
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি কলকাতার স্কুলগুলি এখনও সে ভাবে প্রতিষেধক দেওয়ার শিবির আয়োজন করে উঠতে পারেনি, না কি কলকাতার এই বয়সি পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের প্রতিষেধক দিতে নিয়ে যাচ্ছেন না? কেন এত কম পড়ুয়াদের ভ্যাকসিনেশনের হার?
আরও পড়ুন জোরাল হচ্ছে স্কুল খোলার দাবি, ‘সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী’, জানালেন ব্রাত্য বসু
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “কলকাতার স্কুলে যে সব পড়ুয়া পড়াশুনা করেন তারা সবাই কলকাতায় থাকেনা। স্বাভাবিক ভাবেই যেহেতু স্কুল বন্ধ, তাই প্রতিষেধক নিতে এত দূর যেতে সমস্যা হচ্ছে। বেশির ভাগ স্কুলে স্কুলবাসও চলছে না, ফলে কিছু সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে অনেক স্কুল পড়ুয়া বেসরকারি হাসপাতাল থেকেও টিকা গ্রহণ করেছেন অনেক ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা যোগ হয়নি। স্কুলগুলি যখন আলাদা আলাদা ভাবে তাদের কত জন পড়ুয়া প্রতিষেধক পেয়েছে সেই হিসাব জমা দেবে, তখন তাতে এই তথ্যগুলি থাকবে এবং তখন হয়তো কলকাতার স্কুলে পড়ুয়াদের প্রতিষেধক দেওয়ার হার বেড়েও যেতে পারে”।
তবে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পড়ুয়াদের টিকাদান সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসক সমাজ। এব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’র সাধারণ সম্পাদক, মানস গুমটা জানিয়েছেন, দ্রুততার সঙ্গে টিকা দান সম্পন্ন করে ধাপে ধাপে স্কুলগুলি খোলার বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত হবে”।
আরও পড়ুন স্নাতকোত্তরে আসন বৃদ্ধির দাবি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ
অপরদিকে বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল চৌধুরী জানিয়েছেন, সংক্রমণ হটাত করেই খানিক কমেছে এটা আশার কথা। কিন্তু আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন ওমিক্রন যেকোনো মুহূর্তেই থাবা বসাতে পারে মানব দেহে তাই টিকাদানের কাজ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গেই করা দরকার। সেই সঙ্গে স্কুল গুলি খোলার পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি। তাঁর মতে, প্রায় ২ বছর স্কুলের গেটে তালা ঝুলছে এতে করে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে”। এর সঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে টিকাদানে অনীহা থাকতে পারে, কিন্তু শহরের বুকে আরও বেশি টিকাকরণ প্রয়োজন”।