বিধাননগর পুরনিগমে সোমবার সকাল থেকে প্রায় মেয়রের ভূমিকাতেই কাজ শুরু করে দিলেন ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়। 'নতুন দায়িত্ব' পেয়ে আজ দিনভর মেয়র পারিষদদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডেপুটি মেয়র। এদিন বিকেল সাড়ে তিনটের সময় পুরসভায় আসেন চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। এর ঘণ্টাখানেক পরই পুরসভায় প্রবেশ করেন বিধাননগরের মহানাগরিক সব্যসাচী দত্ত। সোমবার পুরনিগমের অফিসে এদিন নাটকের প্রায় সব উপকরণই মজুত ছিল। পরতে পরতে নাটকীয়তায় মোড়া ছিল এদিনের বিধাননগর পুরভবন।
আরও পড়ুন- ‘পিছন থেকে ছুরি মারি না’, মুকুলের সঙ্গে পরোটা-ফিশ কাটলেট খেয়ে দাবি সব্যসাচীর
বিধাননগর পুরনিগমে দিনের শেষে ডেপুটি মেয়র জানিয়ে দেন, "মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দলের পক্ষে কারা রয়েছে সেখানেই তা পরিস্কার হয়ে যাবে"। এদিকে, এদিন দফায় দফায় সাংবাদিক বৈঠক করেছেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। তিনি নানা বক্তব্যের মাধ্যমে দলকে কেবল বিঁধেই গিয়েছেন। দিনভর সাধারণ পুরকর্মীদের মধ্যেও প্রশাসনিক তথা রাজনৈতিক জটিলতা নিয়েই আলোচনা চলেছে। কে কখন আসছেন, কি বলছেন সেসব আলোচনাতেই ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে পুরকর্মীদের একটা বড় অংশকে।
আরও পড়ুন- দলের এত টাকা আছে! প্রশান্ত কিশোর কোথা থেকে পেমেন্ট পাচ্ছেন, প্রশ্ন সব্যসাচীর
এদিন দুপুরে ডেপুটি মেয়রের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গীয় পুর আইন বইটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন তাপস চট্টোপাধ্যায়। দল মেয়রের পরিবর্তে তাঁকে দায়িত্ব সামলাতে বলায় এদিনই যে তিনি আদা জল খেয়ে সেই কাজে নেমে পড়েছেন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাপসবাবু। ডেপুটি মেয়র বলেন, "এদিন মেয়র পারিষদদের সঙ্গে কথা হয়েছে। রাস্তা, আলো ও ড্রেনেজের কাজ চলবে। উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে"। জটিলতার মধ্যে কাজ কী করে সম্ভব? তাপসবাবুর মন্তব্য, দল জটিলতার বিষয়টা দেখছে। কিন্তু উন্নয়ন প্রক্রিয়া তো চালিয়ে যেতেই হবে। কথা বলার ফাঁকেই তাঁকে ফের বঙ্গীয় পুর আইনের নানা ধারা ঝালিয়ে নিতে দেখা যায়। এদিন তিনি বৈঠক করেছেন ডেপুটি পুরকমিশনারের সঙ্গেও।
আরও পড়ুন- ববি হাকিম ‘বেইমান’, কটাক্ষ সব্যসাচীর
বিকেল গড়াতেই পুরভবনে ফের নাটকীয়তার সূত্রপাত। নিজের দফতরে সাংবাদিক বৈঠকের পর হঠাৎ পুর চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর দফতরে যান সব্যসাচী দত্ত। কেন চেয়রাপার্সনের ঘরে? সব্যসাচীর জবাব, "এই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তাছাড়া বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর-সহ আমারও কাল বারাসাত আদালতে মামলা রয়েছে। তাই একবার চেয়ারপার্সনের দফতরে ঢুকলাম"। এদিন বারে বারে সব্যসাচীবাবু দাবি করেন, "দলের কেউ পদ ছাড়তে বলেনি।" নানা কথা-বার্তায় এদিন একের পর এক তোপ দেগে গিয়েছেন বিধাননগরের মেয়র। এরই মধ্যে মেয়রের পাশে বসেই কৃষ্ণা চক্রবর্তী আক্ষেপের সুরে জানান, তারও মেয়র হওয়ার ইচ্ছা ছিল।
আরও পড়ুন- ‘সব্যসাচী মীরজাফর, সম্মান থাকলে দল ছেড়ে দিক’
উল্লেখ্য, নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ১০ জুলাই পুরনিগমের বোর্ড মিটিং হবে। সেখানে মেয়র, ডেপুটি মেয়র-সহ সব কাউন্সিলরদেরই থাকার কথা। সূত্রের খবর, সেদিনই আস্থা ভোট হতে পারে। তবে আরেকটি সূত্র আবার ওই দিন ভোট হবে না বলেই মনে করছে। তবে, ১০ জুলাইয়ের মধ্যেই যে এ বিষয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সামনে আসবে, সে বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত সংশ্লিষ্ট মহল।