আজ থেকে পাঁচ বছর আগে, ২০১৪ সালের ২০ মে, ভয়ংকর এক আবিষ্কারের সাক্ষী থাকে শিয়ালদা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম। একটি ট্রলি ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলার মৃতদেহের কিছু অংশ, এবং বাকি কিছু দেহাংশ হোল্ড-অলে মোড়া অবস্থায় পাওয়া যায়। আজ সোমবার, নৃশংস সেই হত্যার দায়ে অভিযুক্ত তিনজনকে ফাঁসির আদেশ দিল শিয়ালদা আদালত। বিচারপতি এদিন জানান, তদন্ত প্রক্রিয়ায় যা তথ্য আদালতের হাতে আসে, সেইমতো ২০ জুলাই, ২০১৯-এ দোষী সাব্যস্ত সুরজিৎ দেব (৫০), লতিকা পোদ্দার (৪৩), এবং সঞ্জয় বিশ্বাস (৪০)-কে আজ ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো।
চাঞ্চল্যকর এই কাহিনীর সূত্রপাত ঘটে যখন শিয়ালদায় মৃতদেহটি উদ্ধার করে জিআরপি থানার পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত করতে নেমে পুলিশের হাতে আসে ট্রলির মধ্যে থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ক্যাশমেমো। সেই সূত্র ধরেই জানা যায় মৃতার পরিচয়। নাম, জয়ন্তী দেব, নিবাস লেকটাউন। জয়ন্তীর মৃত্যুর তদন্তের শেষ ধাপে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁর বিবাহবিচ্ছিন্ন স্বামী সুরজিৎ দেবকে।
কী ঘটেছিল পাঁচ বছর আগে?
অনেকেরই মনে থাকবে কুড়ি বছর আগের দিল্লির 'তন্দুর মার্ডারের' কথা। সেখানেও স্ত্রীকে খুন করে তাঁর দেহ একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে গিয়ে খণ্ড খণ্ড করে কেটে দেহাংশ তন্দুর উনুনে পুরে দেয় স্বামী। সুরজিত্ অবশ্য স্ত্রীর দেহ নিয়ে কোথাও যায় নি। বরং মাত্র ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে স্ত্রীর দেহ টুকরো টুকরো করে কাটতে রাজি করায় সবজি ব্যবসায়ী সঞ্জয় বিশ্বাসকে। এসব কার্যকলাপে সঙ্গী ছিল সুরজিতের প্রেমিকা লতিকা পোদ্দার।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে ভুয়ো প্রোফাইল বানিয়ে মহিলাদের হুমকি, কলকাতা পুলিশের জালে ভিন্ন রাজ্যের যুবক
লেকটাউনে নিজের বাড়ির বাথরুমেই স্ত্রীর দেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে, মুখে অ্যাসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে সুরজিৎ, যাতে চেনা না যায়। তার পরে ট্রলিব্যাগ এবং হোল্ড-অলে দেহাংশগুলি মুড়ে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে ফেলে এসে আর পাঁচটা দিনের মতোই দিন কাটাতে থাকে সে। কিন্তু জয়ন্তী দেবীরই কেনা ট্রলির পকেটে থাকা সেই রসিদের সূত্র ধরে আইন নাগাল পেয়ে যায় তার।
তদন্তে জানা যায়, স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলাকালীনই সুরজিতের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পেরে যান জয়ন্তী। এছাড়াও লেকটাউনে তাঁদের ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যেতে অস্বীকার করেন তিনি, যার ফলে অসুবিধেয় পড়ে সুরজিৎ। এসবের জেরেই ঠান্ডা মাথায় সুরজিৎ এবং লতিকা জয়ন্তীকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এখানেই শেষ নয়। খুন করার জন্য ১২ হাজার টাকা দিয়ে তারা ভাড়া করে সুরজিতের পূর্ব পরিচিত সঞ্জয়কে। তদন্তে জানা যায়, জয়ন্তীর মাথায় প্রথমে ভোররাতে আঘাত করে সুরজিৎ। এরপরের দিন সকালে জখম জয়ন্তীর মৃত্যু নিশ্চিত করতে সুরজিৎ এবং লতিকা বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে তাঁকে। এরপর দেহ লোপাটের চেষ্টায় সঞ্জয় বিশ্বাসকে দিয়ে মৃতদেহ খন্ড খন্ড করিয়ে ট্রলি এবং হোল্ড-অলে মুড়ে শিয়ালদা স্টেশনের পার্কিং লটে রেখে দেওয়া হয়।