আমফানে তছনছ বাংলায় ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। এর মাঝে সোশাল মিডিয়ায় যে চিত্র দেখা গেল সেখানে পাবলিশার্সদের পাশাপাশি হা হুতাশে বইপ্রেমীরা।এক ঘূর্ণিঝড় এবং বৃষ্টির দাপটে সব শেষ। একের পর এক বই ভেসে চলেছে জলস্রোতে। কত বই? ক্ষতির পরিমাণ এখনও সম্পূর্ণভাবে মাপতে পারেনি পার্বলিশার্স মহল।
ভারতের সবচেয়ে বড় বইয়ের বাজারের আজ মাথায় হাত। আগামী ভবিষ্যৎ কী জানা নেই ছোটো ছোটো বইয়ের দোকানগুলিরও। বই-তে একবার জল লাগলেই তার প্রাণ শেষ, আর এতো আমফান। অতএব অবিক্রিত বইয়ের ক্ষতি এড়াতে ৬ টাকা কেজি ধরেই কাবুলিওয়ালাদের কাছে বিক্রি করছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত পাবলিশার্স এবং বুকসেলার্স গিল্ডের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫ কোটি।
দু মাস ধরে লকডাউন, তায় ঘূর্ণিঝড়, হুগলি জেলার জঙ্গিপাড়া থেকে নিজের দোকানের অবস্থা দেখতে এসেছিলেন ৪০ বছরের মহম্মদ কাশেম মিদ্দে। তিনি বলেন, "লকডাউনে প্রায় কয়েক লক্ষ ক্ষতি হয়েছে এমনিতেই। এই মুহুর্তে আমাদের কাছে কোনও টাকা নেই। এবার ঘূর্ণিঝড় বইগুলোও কেড়ে নিল আমাদের থেকে। আমার দোকানে জল ঢুকেছে। প্রায় ৯০ হাজার টাকার বই নষ্ট হয়েছে। কিছু বই উদ্ধার করে আমাদের গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছি।"
তবে ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেয়ে আগের দিনই দোকানে আসেন অপর এক দোকানদার সুজিত সাহা। দোকানের নীচে রাখা বই তুলে রেখে যান উপরের তাকে। কিন্তু রুখতে পারলেন ক্ষতি? সুজিত বাবু বলেন, "এতবড় ঝড়ে সব বই আবার দোকানের নীচে পড়ে যায়। আর জলে সব শেষ। স্কুল, কলেজের যে সব বই তার প্রায় ৫০০০ টাকার বই নষ্ট হল। কিছু বই শুকিয়ে নিয়ে গরীব বাচ্চাদের দিয়ে দেব।" প্রসঙ্গত এই এপ্রিল আর মে মাস স্কুল বইয়ের একদম 'পিক সেশন'। লকডাউনে সেই সব আশাতেই ক্ষতির তালা পড়েছে। সুজিত সাহার ক্ষেদোক্তি, "এই সময় আইসিএসই, সিবিএসই, উচ্চমাধ্যমিকের পড়ুয়ারা প্রচুর বই কেনেন। কিন্তু এবার সেই ব্যবসা বন্ধ। প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসানে চলছি। আর এখন ভিজে বই ৬ টাকা দরে বিক্রি করছি কাবুলিওয়ালার কাছে।"
ইতিমধ্যেই বই পাড়াকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অর্থনৈতিক সাহায্য চেয়েছে পাবলিশার্স এবং বুকসেলার গিল্ড। তারা নিজেরাও একটি ত্রাণ তহবিল খুলেছে। গিল্ড প্রধান ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "লকডাউনে এমনিতেই আমরা ভয়ানক দুর্দশার মধ্যে ছিলাম। আর ঘূর্ণিঝড় অর্থনৈতিক ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে দিল। আমরা চেষ্টা করছি এগিয়ে এসে পাবলিশার্স এবং বিক্রেতাদের যতটা সাহায্য করা যায়।"
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন