জোরে খাণিক্ষণ বৃষ্টি। তাতেই জলমগ্ন তিলোত্তমা। চরম হয়রানির শিকার শহরবাসী। জমা জল সরাতে পুরসভার উপর থেকে নিচ- সবস্তরে ছোটাছুটি। 'কলকাতা লন্ডন'- সোশাল মিডিয়াজুড়ে তুমুল তরজা। কিন্তু, সমস্যার সমাধান অধরা। অথচ কলকাতা পুরনিগমের বাজেটে প্রতিবছরই নিকাশি খাতে ধার্য হয় মোটা বরাদ্দ। নিকাশি সমস্যা সমাধানে রয়েছে পুরনিগমের ঋণও। তাহলে ফি-বছর কেন জলযন্ত্রণার চেনা ছবি ধরা পড়ে? কলকাতার পুরনিগম ভোটের আগে তারই সন্ধানে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
শহরে কেন জল জমে?
ভৌগলিকভাবেই তিনশ বছরের প্রাচীন কলকাতা অনেকটা রান্নার কড়ার মতো। ফলে জল জমবেই। এক্ষেত্রে জমা জল সরাতে পাম্পই ভরসা। সাধারণত কলকাতায় ঘন্টায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই জল জমবে।
এছাড়াও রয়েছে শহরবাসী কু-অভ্যাসও। সতর্ক করা হলেও কলকাতায় প্লাসটিকের ব্যবহার কমানো সম্ভব হয়নি। যত্রতত্র ময়লা ফেলা নিয়ে বাসিন্দারা সতেচন নন। ফলে নর্দমা, নিকাশি নালায় প্লাসটিক, জঞ্জাল জমে গিয়ে জল যেতে পারে না। তখনই জল উপচে গিয়ে ভেসে যান কলকাতা।
নিকাশি নালা থেকে নিয়মিত পলি তোলা হয় না। পূর্ব কলকাতার জলাভূমিগুলিও (এগুলিতেই কলকাতার নিকাশই জল গিয়ে পড়ে) নির্মাণ কাজের ফলে বুজে যাচ্ছে।
কোথায় কোথায় জল জমে?
উত্তর কলকাতার আমর্হাস্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, কলেজ স্ট্রিট, বিধান সরণি জল জমার জন্যই বিখ্যাত। অবস্থার তেমন বদল হয়নি। বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগের শেষ নেই বেলালা, ঠাকুরপুরকুর অঞ্চলের বাসিন্দাদের। টানা তিন-চার দিনও জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে বেহালার বিস্তীর্ণ অংশে। দক্ষিণ কলকাতার, এলগিন রোড, খিদিরপুর, ভবানীপুর, গড়িয়াহাট, ঢাকুরিয়া, গোলপার্ক এলাকাতেও জমা জদলের সমস্যা নজরে পড়েছে। সমস্যার ছবি উঠে এসেছে শহরের নানা দিক থেকে। ইএম বাইপাসেও জল জমে বেহাল অবস্থা হয়েছে।
নিকাশি খাতে বরাদ্দ ও খরচ?
ব্রিটিশ আমলে তৈরি হয়েছিল কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা। ফলে সময়ের সঙ্গে তা বদল ও সংস্কারের প্রয়োজন হয়েছে। গত একদশকে নিকাশি সংস্কারে খরচ হয়েছে বিপুল অর্থ। JNNURM প্রকল্পে খরচের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ প্রায় ১২০০ কোটি। কাজ শুরু ৩২০০ কোটি টাকার। এই অর্থ ADB ঋণ থেকে আসছে। কলকাতা পুরনিগম প্রত্যেক বছর প্রায় ২৫০-২৭০ কোট টাকা নিকাশি খাতে খরচ করে থাকে।
আদৌ কী সমাধান রয়েছে?
বিশেষজ্ঞ ও পুরনিগমের কাজ পরিচালনায় অভিজ্ঞদের বক্তব্য, নিকাশি খালগুলি নিয়মিত সংস্কার করতে হবে। পুকুর, জলাশয় সংরক্ষণ প্রয়োজন। পূর্ব কলকাতার জলাভূমি ভরাট হতে দেওয়া যাবে না। প্লাসটিক ব্যবহার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন হতে হবে। না হলে সমস্যার সমাধা হবে না।
কী বলছেন প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিং?
'কলকাতার বয়স তিনশ বছরের বেশি। ব্রিটিশ আমলে তৈরি শহর। বৃষ্টি হলে জল জমবেই। মুম্বই, দিল্লি, এমনকি কলকাতার সঙ্গে যে শহরের তুলনা চলে সেই লন্ডনেও জল জমে। রাতারাতি সমস্যার সমাধানও হবে না। পুরনিগমের কাজ হল জমা জল দ্রুত সরানো। সেই কাজ তৃণমূল পুরবোর্ডের আমলে ভালোভাবেই হয়েছে। কলকাতার শহরজুড়ে গত কয়েকবছরের নিকাশি ব্যবস্থা বদল হয়েছে। ফলে জমা জল সরছেও তাড়াতাড়ি। সঙ্গে মানুষকেও সচেতন হতে হবে।'
পুর উদ্যোগ
মেয়র পারিষদ দ্রুত জমা জল সরার দাবি করলেও এবার শহর থেকে জল নামতে দেরি হয়েছে। কেন এই অবস্থা? সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যেই দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বৈঠছক করেছেন প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেখানেই নাকি স্থির হয়েছে যে, খালগুলিকে সংস্কার, প্লাসটিকের ব্যবহার নিয়ে শহরবাসীকে সচেতন করা, আধুনিক পদ্ধতিতে নর্দমা পলি তোলার কাজ বৃদ্ধি করা হবে। পুর আধিরিকদের আশা, KIPP-র কাজ সম্পূর্ণ হলে জমা জলের সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন- পঞ্চায়েত থেকে পুরনিগমে, ৫ বছরেই আমূল সংস্কার, তবুও কলকাতার এই ওয়ার্ডে খামতি কোথায়?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন