স্যাকরার ঠুকঠাক বন্ধ হয়েছে মেট্রো রেলের টানেল বোরিং মেশিনের এক ঘায়ে। বৌবাজার সোনাপট্টি এলাকাকে তাই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন গ্রাস করেছে নিস্তব্ধতা। বাপ ঠাকুরদার ব্যবসা। আগাগোড়া নিজেদের স্বর্ণকার বা অলঙ্কার গড়ার কারিগর হিসাবেই জেনে এসেছেন দত্ত বাড়ি, শীল বাড়ি, মুখুজ্জে বাড়ির কর্তারা। দুর্গা পিথুরি লেন ও স্যাকরাপাড়ায় প্রতিবছর বাড়িতে বাড়িতে ঘটা করে পূজিত হন বিশ্বকর্মা। কিন্তু মেট্রোর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের কারণে এখন এই দুই পাড়া জনমানবহীন। তাই লাটে উঠেছে পুজাপাঠ। এই দুই পাড়ায়, সিংহভাগে রয়েছে গয়না তৈরির কারখানা। যা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। তাই পুজোর গন্ধ নেই এ চত্বরে।
গৌর দে লেনে অবশ্য সে চিত্র নেই। তাই এ চত্বরে বিশ্বকর্মা এবছর সর্বজনীন। যাঁরা পুজো করতে পারলেন না, গৌর দে লেনেই নমো নমো করেই বিশ্বকর্মাকে তুষ্ট করলেন দুর্গা পিথুরি লেন ও স্যাকরাপাড়ার গৃহহীন কারিগররা। বুধবার সকালে দুর্গা পিথুরি লেনের সামনে গার্ডরেলের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছে গত বছরের বিশ্বকর্মা পুজোর স্মৃতি আওড়ে গেলেন।
আরও পড়ুন: ভারতের বাজারে সদ্য লঞ্চ করা হল রয়্যাল এনফিল্ডের ক্লাসিক ভার্সন, দাম কত জানেন?
সেখানে দাঁড়িয়েই গৃহহীন অভিজিৎ পাল জানালেন, "কারখানার কর্মচারী আর মালিক, সকলে একসঙ্গে মিলেমিশে পুজো করা হত, বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন খুব রাত করে ঠাকুর আনতাম। পাড়ায় যেহুতু অনেকের বাড়িতে পুজো তাই গলিতে ঠাকুর ঢোকানো নিয়ে সমস্যা হত, কিন্তু তাতেও একটা অন্য ভালোবাসা ছিল। ছোটবেলা থেকে এতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম আমরা। কিন্তু এবছর হঠাৎ করে সব বন্ধ হয়ে গেল। জানি না ভবিষ্যতে কী আছে। বাপ ঠাকুরদার ব্যবসা, ভিটে, সব তো লাটে উঠল।"
দুর্গা পিথুরি লেনেরই আরেক বাসিন্দা বিদিশা দাস বলেন, "এপাড়ায় মোটের ওপর সকলের বাড়িতেই যেহুতু ছোট বড় কারখানা রয়েছে, তাই চিরকালই বিশ্বকর্মা পুজের রব বেশি। শহরের আর পাঁচটা জায়গার চেয়ে এখানে ঘুড়ি ওড়ানোর চলও ছিল অনেক বেশি। ছেলেপুলেরা গলা ফাটিয়ে ভোঁ-কাট্টা শব্দে কানের মাথা খেত। সে সব কোথায় হারিয়ে গেল। ছেলে সকালে উঠেই জিজ্ঞাসা করেছে, মা ঘুড়ি ওড়াবো না এবার?"