মে মাসের মাঝ সপ্তাহে হঠাৎ আকাশ কালো করে বৃষ্টি, সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। একধাক্কায় অনেকটা নামিয়ে দিল শহরের তাপমাত্রা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই মেঘলা ছিল শহরের আকাশ। দুপুরের পর থেকে হঠাৎ আকাশ কালো করে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাঝিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি। সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়াও। তুমুল বৃষ্টিতে ভিজল কলকাতা ও শহরতলি। জানা গিয়েছে, বৃষ্টি হয়েছে হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমানে। সকাল থেকেই আকাশের মুখ ছিল ভার। দুপুরেই পরই আকাশ কালো মেঘে ঢাকে।
মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যেই কলকাতায় ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বৃষ্টি হলেও এখনই কমছে না দাবদাহ। বজায় থাকবে অস্বস্তিকর আবহাওয়া বলেই পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের।
এদিকে এদিকে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানার পুঠিমারী মাঠে বাজ পড়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। মৃতের নাম নাজির হোসেন (৩৫)। মৃতের বাড়ি যান সামশেরগঞ্জের বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র মুন্ডা এবং বিদায়ী বিধায়ক আমিরুল ইসলাম। এছাড়াও পূর্ব বর্ধমান জেলায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। মৃতদের নাম সঞ্জয় প্রামাণিক ও শরিফ মুন্সি। হাওড়াতেও বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। মৃতদের মধ্যে একজনের নাম অশোক বিশ্বাস। অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি।
বৃষ্টির জেরে স্বস্তি নিশ্বাস ফেলেছেন সাধারণ মানুষ। ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে দাবি চাষিদের। এখন বোরো ধান কাটার কাজ চলছে জোর কদমে। বৃষ্টির কারণে ধানকাটা মেশিন নামতে পারবে জমিতে। তাতে ধান ঘরে তুলতে আরও সময় লাগবে। অন্যদিকে যে সমস্ত জমিতে ধান কেটে রাখা ছিল সেই ধান ভিজে গিয়েছে। ফলে মাথায় হাত চাষিদের।
এদিকে, রাজ ভবনের সামনে বৃষ্টির জমা জল থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে রাত পর্যন্ত তাঁর কোনও পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঝড়বৃষ্টির ফলে রাজভবনের উত্তর দিকের গেটের সামনে জল জমে যায়। হাইকোর্টের দিক থেকে ধর্মতলার দিকে আসছিলেন এক ব্যক্তি। আচমকাই তিনি জলে পড়ে যান। যেখানে তিনি পড়ে যান, তার সামনেই একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ছিল। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় হেয়ার স্ট্রিট থানায়। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই ফুটপাতের গায়েই একটি বিদ্যুতের খুঁটি ছিল। তার গোড়ায় খোলা অবস্থায় ছিল বিদ্যুতের তার। কোনও কারণে খোলা তারের সংস্পর্শে আসেন ওই পথচারী। সিইএসই যদিও দাবি করেছে, ওখানে কোনও তার খোলা ছিল না।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে কলকাতা, শহরতলি-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ঘণ্টাদুয়েক ধরে ঝড়বৃষ্টি হয়। এর জেরে শহরের বিভিন্ন জায়গা জলমগ্ন হয়ে যায়। এসপ্ল্যানেড এলাকা, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন জায়গায় জমে যায় জল। বেশ কয়েক জায়গায় কিছু গাছপালাও ভেঙে পড়ে। জল জমেছে এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিভাগের ভিতরেও। জলের উপর দিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে স্ট্রেচার। কার্ডিওলজি বিভাগেও জল জমেছে।