পয়লা জুলাই থেকে রাজপথে বাস নামানোর অনুমতি মিললেও, এই গণপরিবহণ হাতে গোনা। নেপথ্যে জ্বালানির অগ্নিমূল্য এবং বাসভাড়া বাড়ানোয় নবান্নের অনীহা।এই গেঁরোয় পড়ে ত্রাহি অবস্থা নিত্যযাত্রীদের। করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ ট্রেন-মেট্রো। বিধিনিষেধ শিথিল করে পয়লা জুলাই থেকে বাস-অটো চালানোয় নবান্ন সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। কিন্তু রাস্তায় সেভাবে দেখা নেই বেসরকারি বাসের। তাই হাতের কাছে কোনও একটা বাস পেলেই তাতে বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন শহরবাসী। আদতে ভাড়া না বাড়িয়ে বাস নামাতে নারাজ বেসরকারি বাসের মালিকরা।
এবার তাই সমধানসুত্র বের করতে সোমবার বাস মালিকদের বৈঠকে ডেকেছে পরিবহণ দফতর। এই বৈঠকে ডাকা হয়েছে বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি, সিটি সুবার্বন বাস সার্ভিসেস, মিনিবাস আপারেটার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি, ওয়েস্ট বেঙ্গল অন্ড মিনিট বাস ওনার্স এসোসিয়েশন, জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট-সহ বেশকিছু সংগঠনকে।
বৈঠক ডেকে নবান্ন সমাধানসুত্র চাইলেও, বাস মালিক সংগঠনদের হুশিয়ারি ভাড়া না বাড়ালে কোনওভাবেই তারা বাস রাস্তায় নামাবে না। এই হুশিয়ারি প্রসঙ্গে পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘সমস্যার কথা আমরা জানি। সরকার বিষয়টা দেখছে। বাস মালিকদের আমরা বারবার বলেছি বাস চালাতে।’
যানা গিয়েছে, জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের অধীনে রাজ্যে ৪২ হাজার বেসরকারি বাস চলে। কলকাতা-শহরতলি থেকে রোজ প্রায় সাড়ে সাত হাজার বেসরকারি বাস চলাচল করে। এদিকে, গত বছর লকডাউন থেকেই যাত্রীবাস পরিবহণে ঘোরতর সংকট শুরু হয়েছে। এবার সেই পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। বাসমালিকদের অভিমত গাঁটের কড়ি খরচ করে রুটে বাস নামানো সম্ভব নয়। ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তায় বাস চলার কথা ছিল। তবে অধিকাংশ বাসই সেদিন পথে নামেনি। দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেছিলেন, “বাস নামবে কী করে? ৯৬ টাকা ডিজেলের লিটার। রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারকেই বলেছি ভাড়াবৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই। দুই সরকারই উদাসীন। ২০২০-এর কমিটির রিপোর্ট সামনে আসেনি। ২০২১-তেও কমিটি হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে গাড়ি বসে আছে। ইএমআই ফেল, মেইনটেন্যান্স ও ইনসিওরেন্স রয়েছে। পরিবহণ ব্যবসা ভয়ানক পরিণতির দিকে এগোচ্ছে।”
গতবছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন এবার থেকে বাসের ভাড়া ঠিক করবে বাসমালিকরা। তারপর কমিটিও গঠিত হয়েছিল। তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মোটর ভেহিকেলস আইনে আছে ভাড়া ঠিক করবে রাজ্য সরকার। সরকার সেই আইন পরিবর্তন করে বলুক বাসমালিকরা ভাড়া নিজেরা ঠিক করবে। আইনও পরিবর্তন করবে না, আবার ভাড়া নিজেরা বাড়ালেও বিপদ। ভাড়াবৃদ্ধি না হলে কোনও ভাবে বাস চলাচল সম্ভব নয়।” তাঁর দাবি, “প্রতিদিন রাস্তায় বাস নামালেই লোকসান ১৫০০-২০০০টাকা। সরকার তো ভর্তুকি দিয়ে গাড়ি চালায়, আমরা কোথায় টাকা পাব?”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন