আমফানের ক্ষতচিহ্ন কলকাতা শহরজুড়ে এখনও বর্তমান। পাড়ায় পাড়ায় চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। চলছে পথ অবরোধ। জানা গিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিক্ষোভ-অবরোধে শামিল হয়েছেল শাসকদলের কর্মী-সমর্থকরাও। গাছ কেটে সরানোর জন্য সেনাকেও মহানগরের পথে নামানো হয়েছে। এসময় কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমানে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র প্রতিনিধিকে। কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক বলেন, "আমার বাড়ির সামনের একটা গাছ অর্ধেক কাটতে তিন দিন পার করে দিয়েছে। আমি নিজে সেখানে সারারাত ছিলাম।" এরপরই আমফান পরবর্তী দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দিতে পুরনিগমকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন একদা ‘সফল’ এই মেয়র।
বুধবারের ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার একাধিক জায়গায় গাছ উপড়ে গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তা এক চুলও সরানো যায়নি। বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুত্ নেই, পানীয় জল নেই, মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। অর্থাৎ কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থাই নেই। নাজেহল অবস্থা সাধারণের। জানা গিয়েছে, খোদ শহর কলকাতায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ উপড়ে গিয়েছে। গলিতে, বাড়ির উপর, গাছ পড়ে রয়েছে সর্বত্র। এমতাবস্থায় কলকাতা পুরসভাকে সুব্রতর পরামর্শ, "শহরেরে গলিতে বা বাড়ির উপর পড়ে থাকা গাছ আগে সরানো উচিত। বড় রাস্তায় গাড়িতে যাওয়ার সময় গাছ পড়ে থাকলে একটু ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু গলির রাস্তায় তা সম্ভব নয়। সবার আগে প্রয়োজন গলির রাস্তায় বা বাড়ির ওপরে পড়ে থাকা গাছ সরানো। কারণ, বাড়ির ওপরে গাছ পড়ে থাকায় নানাবিধ সমস্যা হয়। বাড়িতে খাবার নেই, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, পাইপ ভেঙে গিয়েছে- এমন নানা যন্ত্রণা তাঁদের তাড়া করছে। এই ক্ষোভ প্রশমন করা দরকার।" তিনি বলেন, "বোঝানো হচ্ছে, ভিতরের রাস্তা পরে পরিস্কার করা হবে। আগে বড় রাস্তা।" সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে গাছ কেটে রাস্তা পরিস্কার করার জন্য। তাঁর পরামর্শ, "পুরসভার উচিত মিলিটারিদের দিয়ে বড় রাস্তার গাছ কাটা। ভিতরের রাস্তা পরিস্কার করুক পুরসভা। "
আমফান পরবর্তী অবস্থায় এই প্রবীণ রাজনীতিক তাঁর এলাকার গাছ কাটার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে। তিনি বলেন, "আমার বাড়ির সামনে একটা গাছ ভেঙে পড়েছে। কাটার সময় একদিন সারা রাত আমি সেখানে হাজির ছিলাম। দেখলাম, তিন দিন পরে আধখানা গাছ কাটা হয়েছে। তাও সেটা বড় গাছ নয়, মাঝারি মাপের। ভাঙা কাটারী, করাত, কুড়ুল নিয়ে গাছ কাটছে। অথচ এখন আধুনিক যন্ত্র দিয়ে কয়েক সেকেন্ডে বড় বড় গাছ কাটা যায়। গাছ কাটা হয় ব্লেড দিয়ে কাগজ কাটার মত। আমাদের টেকনিক্যাল দিকটা খুবই দুর্বল।"
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রশাসক মন্ডলী কলকাতা পুরসভা পরিচালনা করছে। সম্ভবত সে জন্যই মেয়র পারিষদ বা কাউন্সিলরদের গা ছাড়া ভাব। নির্বাচিত হলে সাধারণের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা থাকে, সেই উদ্যোগ চোখে পড়ছে না এখন। এদিকে, একেই করোনা নিয়ে জেরবার, তারওপর আমফান। ফলে ল্যাজে গোবরে অবস্থা কলকাতা পুরসভার। এর জেরেই সারা কলকাতা সচল হতে আরও বেশ কিছু দিন সময় লাগবে বলে মনে করেছেন তাঁরা।