শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর পর এবার কলকাতা লিটারেরি মিট। বুধবার সন্ধ্যায় ফের প্রতিবাদের মুখে পড়লেন প্রাক্তন সাংবাদিক তথা বর্তমানে বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, এবং বিশ্বভারতীর বিতর্কিত উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই বার্ষিক সাহিত্য উৎসবে স্বপনবাবু তাঁর সাম্প্রতিক বই 'Awakening Bharat Mata' সংক্রান্ত একটি আলোচনাসভায় আমন্ত্রিত হন, যেখানে তাঁর সঙ্গেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও। আলোচনা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন লেখক তথা চিকিৎসক কুণাল সরকার।
আলোচনার শুরুতেই দর্শকদের মধ্যে থেকে কয়েকজন উঠে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন দু-সপ্তাহ আগে বিশ্বভারতীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পরে জানা যায়, তাঁরা রেভোলিউশনারি স্টুডেন্টস ফ্রন্ট (আরএসএফ)-এর সদস্য। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)-এর কর্মীরা তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার পর ফের শুরু হয় আলোচনাসভা।
আরও পড়ুন: জেএনইউ-এর পর বিশ্বভারতী! রাতের অন্ধকারে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ুয়াদের মারধর, অভিযুক্ত সেই এবিভিপি
তবে ভিক্টোরিয়ার ইস্ট গেট, অর্থাৎ সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের উল্টোদিকে প্রবেশদ্বারের বাইরে চলতে থাকে প্রতিবাদ। এই গেটের বাইরে স্বপনবাবুর সেশন শুরু হওয়ার আগে থেকেই জড়ো হচ্ছিলেন প্রতিবাদীরা। তাঁদের প্রবেশ রুখতে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইস্ট গেট, যার ফলে বৈধ পাস থাকা সত্ত্বেও ভেতরে ঢুকতে পারেননি বেশ কিছু সাধারণ দর্শকও।
বুধবারের ঘটনা নিয়ে স্বপনবাবুর বক্তব্য, "এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। কিছুই তেমন হয় নি, তবে যাঁদের এই সেশন নিয়ে আগ্রহ ছিল, হয়তো বা তর্ক করতেও চাইছিলেন, তাঁদের বাইরে থাকতে হয়। যাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, তাঁদের বিশ্বভারতী নিয়ে কিছু অভিযোগ ছিল, এবং উপাচার্যের সঙ্গে কিছু সমস্যা ছিল, যে ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। তবে তিনি তো এখানে উপাচার্য হিসেবে আসেন নি, আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু লেখালেখি করেছেন বলে এসেছিলেন।"
ভিক্টোরিয়ার বাইরে যে প্রতিবাদ চলছিল, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, "ওঁদের বক্তব্য ছিল যে আমার মতো কাউকে কোনোরকম মঞ্চই দেওয়া উচিত নয়। আমার কাছে এই চিন্তাধারা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি কারোর প্রতিবাদ করার অধিকারকে অস্বীকার করছি না।"
আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার বিশ্বভারতীতে হামলা চালানো অভিযুক্ত
চলতি মাসের গোড়ার দিকে বিশ্বভারতীতে একটি সেমিনারে স্বপনবাবুকে আমন্ত্রণ জানান বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, কিন্তু সেখানে প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীরা একটি ঘরে কয়েকঘণ্টা বন্ধ করে রাখেন সাংসদ এবং উপাচার্যকে। সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে স্বপনবাবু জানান, "উপাচার্য আমাকে, এবং ভিন্নমতের আরও কয়েকজনকে, বলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও আমি শুনলাম, আমার সঙ্গে এক মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এই মনোভাবটা আমার কাছে পীড়াদায়ক। এবং এটা একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কলকাতায় তো বটেই, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়েও। এমনকি কিছু পশ্চিমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এর প্রভাব পড়ছে।"
একাধিক চেষ্টা সত্ত্বেও যোগাযোগ করা যায়নি আরএসএফ-এর সম্পাদক নির্বাণের সঙ্গে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী সুদীপ্ত সাহা, যিনি স্বপন দাশগুপ্তকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সাহিত্য উৎসবের সমালোচনা করে একটি ফেসবুক পোস্ট লেখেন, বলেন যে অধিকাংশ প্রতিবাদীকে গেটে আটকে দেওয়া হলেও কয়েকজন অলক্ষ্যে ঢুকে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে সিআইএসএফ-এর ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় বলেও জানান তিনি। "সবারই বলার অধিকার আছে, কিন্তু আমরা তো আগেই জানতাম স্বপন দাশগুপ্ত কী বলবেন, যা বর্তমানে অসংখ্য ভারতীয় যা নিয়ে লড়ছেন, তার পরিপন্থী," বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীতে সিআইএসএফ নিয়োগ, প্রতিবাদে পথে শিক্ষক, পড়ুয়ারা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, প্রতিবাদীদের সঙ্গে সিআইএসএফ-এর গোলমাল শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সভাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন দর্শকদের সিংহভাগ। তাঁর আরও বক্তব্য, যাঁরা প্রতিবাদ করছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দর্শকদের নিষেধ করে দেন ছবি বা ভিডিও তুলতে। যেহেতু ইস্ট গেট তখনও বন্ধ, দর্শকদের বেরোতে হয় নর্থ গেট বা মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে।
উদ্যোক্তাদের তরফে এক মুখপাত্র জানান, "ভিক্টোরিয়ায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ই সিআইএসএফ-এর আওতায় পড়ে। আমাদের সেখানে কিছু বলার নেই। আমরা শুধু বারবার সকলকে বলি যেন হিংসা থেকে বিরত থাকেন।"