বিরোধী শিবিরের তুমুল সমালোচনা। রাজ্যপালের কড়া সতর্কবাণী। কোভিড যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নিশানায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, সেসবকে গুরুত্ব না দিয়ে লকডাউন নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন এবং আশ্বস্ত করতে ফের পথে নামলেন মমতা। লকডাউন পালন করার জন্য গাড়ি থেকেই নাগরিকদের কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। বৃহস্পতিবার মৌলালি ও বেহালায় গিয়ে করোনা সংক্রমণ নিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত কয়েকদিন তিনি রাজাবাজার, পার্কসার্কাস, খিদিরপুর, তিলজলা ও বালিগঞ্জ ফাঁড়ি-তে গিয়ে একই কাজ করেছেন তিনি।
লকডাউনে খাঁ খাঁ করছে শহরের অন্যতম ব্যস্ত মোড় মৌলালি। বিকেল চারটে নাগাদ সেখানেই এসে দাঁড়াল সাদা এসইউভি। চেনা কণ্ঠস্বরে মাইকে বেজে উঠল 'আমি মমতা ব্যানার্জী।' মৌলালি মোড়ের চারপাশের গৃহবন্দি মানুষগুলো তখন বাড়ির বারান্দায়, ছাদে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। অসুবিধা সত্ত্বেও সকলে যাতে লকডাউন মেনে চলেন, সেই আবেদন ততক্ষণে বাসিন্দাদের উদ্দেশে করতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলছেন, 'আমায় ক্ষমা করুন, আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। গাড়ি থেকে নামতে পারছি না। আপনারা বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন।' এরপরই মাস্ক মুখে মমতা বললেন, 'লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ। আপনাদের কাজ নেই। অসুবিধা হচ্ছে, তবুও আপনারা আমাদের সহযোগিতা করছেন। আর কটা দিন করুন, যতদিন না আমরা সকলে করোনা তাড়াচ্ছি।' তিনি বাসিন্দাদের মনে করিয়ে দেন, 'আপনাদের সহযোগিতার মাধ্যমেই এটা সম্ভব। সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।'
আরও পড়ুন- করোনার প্রকোপ বাড়ছে বাংলায়, আক্রান্ত বেড়ে ৩৩৪
জ্বর বা সর্দি-কাশি হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ারও পরামর্শ দিতে ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। বাসিন্দাদের উদ্দেশে তাঁর আবেদন, 'আপনাদের সকল যন্ত্রণা আমাদের উপর ছেড়ে দিন। জ্বর হলে বা উপসর্গ মনে হলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কোনও কোভিড হাসপাতাল, বাঙুর হাসপাতালে যান। পরীক্ষা করুন। চিকিৎসা হলে ভাল হয়ে উঠবেন। মাস্ক অবশ্যই পড়বেন। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাত ধোবেন।'
মৌলালিতে মিনিট পঁয়তাল্লিশ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় থিয়েটার রোড, আলিপুর রোড ধরে পৌঁছয় বেহালায়। মমতা আসার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে শুরু হয় বৃষ্টি। কিন্তু, দমেননি মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যেই মানুষকে সচেতন করার কাজ চলতে থাকে। বাসিন্দাদের পয়লা বৈশাখ ও রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানান তিনি। বলেন, 'আমাদের বাড়িই এখন মন্দির, মসজিদ, চার্চ ও গুরুদ্বার। কোনও উৎসবই আমরা বাইরে বেরিয়ে আড়ম্বরে পালন করতে পারব না। বাড়িতে উৎসব পালন করুন।' বাসিন্দারা রেশন পাচ্ছেন কিনা তাও জিজ্ঞাসা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- পত্রযুদ্ধ! ‘আপনি পুরোপুরি ব্যর্থ’, মমতাকে পাল্টা ৫ পাতারই চিঠি রাজ্যপালের
মুখ্যমন্ত্রীর রাস্তায় বেড়িয়ে সচেতন করার এই উদ্যোগকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেছেন, 'প্রমাণ হচ্ছে যে প্রশাসন ও শাসক দলে এইসব করার মত লোক নেই। এটা ভোট ব্যাঙ্কের গিমিক রাজনীতি। রাজ্য সরকার শুধু করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থই নয়, পরিসংখ্যান চাপা দেওয়ারও চেষ্টা করছে।'
তবে সমালোচনা গায়ে না মেখে, গত কয়েকদিন ধরেই শহরের চিহ্নিত হটস্পট এলাকাগুলোয় যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। লকডাউনে এর আগে, বাজার পরিদর্শন থেকে রেশন দোকানে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন তিনি। বাজারে কিভাবে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব তা জানাতে মাটিয়ে দণ্ডি কেটে দিয়েছেন। কথা বলেছেন নিকাশি কর্মীদের সঙ্গে। যা নিয়ে বিরোধী শিবিরের টিকা-টিপ্পনিও ধে এসেছে তাঁর দিকে। তবে, মানুষকে সচেতন করতে নিজস্ব ঢঙেই এলাকায় এলাকায় যাওয়াকেই বেছে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন