Advertisment

কলকাতার স্টিয়ারিং বাম দিকে ঘুরবে এবার? আত্মবিশ্বাসী রেড ভলান্টিয়ার্স প্রার্থীরা

KMC Poll 2021: পুরভোটে রেড ভলান্টিয়ার্স বাম প্রার্থী! লড়াই কতটা, ঘুরে দেখল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা

author-image
Joy Deep Sen
New Update
Red Volunteer, Left Candidate, KMC Poll

৯৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারে বাম প্রার্থী সুশান্ত পাল। নিজস্ব চিত্র

KMC Poll 2021: করোনাকালে আম আদমির কাছে ভরসাযোগ্য নাম রেড ভলান্টিয়ার। হাসপাতালের বেডের জন্য হোক কিংবা দুয়ারে অক্সিজেনের ব্যবস্থা। দুঃস্থদের খাদ্য সামগ্রি বিতরণ থেকে করোনা রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা কিংবা শ্রমজীবী ক্যান্টিন। প্রতি সঙ্কটেই সামাজিক মাধ্যমে ডাক পড়েছে রেড ভলান্টিয়ারদের। বাম মনোভাবাপন্ন ছাত্র-যুবরাই মূলত এই সংগঠনের উদ্যোক্তা। যদিও তাঁদের পিছনে থেকে উৎসাহ কিংবা পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন একাধিক স্থানীয় স্তরের একাধিক বাম নেতা। এবার সেই পরিচিত রেড ভলান্টিয়ারদের মধ্যে থেকেই একাধিক মুখকে আসন্ন কলকাতা পুরভোটে প্রার্থী করেছে বামফ্রন্ট। টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের এমন তিনটি ওয়ার্ড রেড ভলান্টিয়ার তথা বাম প্রার্থীদের সঙ্গে ঘুরে দেখল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।  জানার চেষ্টা করল ওয়ার্ড উন্নয়নে তাঁদের পরিকল্পনার কথা। ‘

Advertisment

টালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকার ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সুশান্ত পাল। তিনি এলাকায় প্রবীণ রেড ভলান্টিয়ার হিসেবে পরিচিত। এলাকায় স্বচ্ছ এবং পরিচিত মুখ। ওয়ার্ড ঘুরে তাঁর মনে হয়েছে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা কাজ করছে। তাঁর খোঁচা, ‘যদিও এই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলরকে তৃণমূলের ৯৯ ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে। আম্ফানের সময় তাঁকে কাছে পায়নি মানুষ। কিন্তু আমাকে ডাকলেই পেয়েছে। আমি সবসময় এলাকার চায়ের দোকানেই থাকি। আর সেটা বুঝতে পেরেই পরিযায়ী একজনকে (দেবব্রত মজুমদার) উড়িয়ে নিয়ে এই ওয়ার্ডের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ‘ শনিবার পথে নেমে প্রচারে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কী বললেন সুশান্ত পাল।

publive-image
এলাকার জমা জল ঠেলেই প্রচার ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী অজন্তা দাস।

রেড ভলান্টিয়ার থেকে বাম প্রার্থী, এই যে রূপান্তর কীভাবে দেখছেন এই প্রার্থী?   

সুশান্ত পালের মন্তব্য, ‘করোনার সময় মানুষের পাশে থাকার সঙ্গে বাম প্রার্থী হওয়ার মধ্যে কোনও বিশেষত্ব নেই। আমরা মানুষের পাশে থেকে মানুষের কাজ করতে উদ্যোগ নিয়েছি। গত ৪ দশক ধরেই আমরা এই কাজ করে এসেছি আগামি দিনেও করব। যখনই মানুষ সঙ্কট বা বিপদে পড়বে। আমাদের ডাকলেই পাবেন

প্রচারে বেরিয়ে শাসক দলে বিরোধিতার মুখে পড়ছেন?

৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই বামপ্রার্থী বলেন সেভাবে কোনও ঝামেলা বা অশান্তি নেই। তবে কয়েকটা জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ফ্লেক্স ছেঁড়া হয়েছে।

রেড ভলান্টিয়ার এই উদ্যোগের পাশে পাশে দলমত, রঙ, ধর্ম, লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রচুর মানুষের সমর্থন। কিন্তু তাঁরাই যখন রাজনৈতিক ময়দানে কিংবা ভোট প্রার্থী, তখন ব্যালটে সেই জনসমর্থনের প্রতিফলন নেই? এর কী ব্যাখ্যা?

প্রার্থীর দাবি, ‘রেড ভলান্টিয়ার কর্মযজ্ঞের পরে সেভাবে কোনও বড় নির্বাচন রাজ্যে হয়নি। তাই সেই উদ্যোগের সঙ্গে ভোট রাজনীতির বিষয়টা গুলিয়ে ফেলা ভুল। যদিও এই সময়ের মধ্যে ৭টি বিধানসভার উপনির্বাচন হয়েছে, কিন্তু তার যে ফলাফল অবিশ্বাস্য। ৮০%-এর উপরে ভোটদানের হার অসম্ভব। অবাধ এবং স্বচ্ছ ভোট হলে এই ফলাফল সম্ভব নয়। আমি এই ওয়ার্ডে জয় নিয়ে ১০০% নিশ্চিত। মানুষের সাড়া ভালোই আসছে।

৯৭ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া আরও একটি ওয়ার্ড ৯৫। সেই ওয়ার্ডের বাম তথা সিপিএম প্রার্থী অন্বেষা বিশ্বাস। করোনাকালে রেড ভলান্টিয়ার হিসেবে এলাকার যথেষ্ট পরিচিত এবং জনপ্রিয় মুখ বামেদের এই তরুণ প্রার্থী। তিনি আবার নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী তপন দাশগুপ্তকে দুর্নীতিপরায়ণ প্রশাসক মনে করেন। সেই অন্বেষা প্রচারের ফাঁকেই তাঁর ওয়ার্ড নিয়ে পরকিল্পনার কথা জানান।

রেড ভলান্টিয়ার থেকে বাম প্রার্থী, এই রূপান্তরে আরও কতটা প্রত্যাশা বাড়ল?

অন্বেষা বলেন, ‘আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, আমরা কোনও এনজিও নই। আমরা বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। সরকারের যেগুলো আপনাদের দেওয়ার কথা, সেগুলো আমরা আপনাদের কাছে এগিয়ে দিচ্ছি। আর সবচেয়ে বড় কথা রেড ভলান্টিয়ার্স নাম আমাদের দেওয়া নয়। মিডিয়া বা মানুষের দেওয়া। তাই প্রত্যাশার নতুন কিছু নেই। আমরা লড়াই করেছি। মানুষ ভরসা করলে আমি এলাকায় কাজ করে যাব। প্রার্থী হব, এটা না জেনেই করোনার সময় মানুষের সঙ্কট দূর করার চেষ্টা করেছি।‘   

তিনি জুড়েছেন, ‘প্রথম ঢেউয়ের সময় আমরা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই কর্মীরা নিজেদের সামর্থ্য মতো সেই কাজ করেছে। আর দ্বিতীয়ও ঢেউয়ের সময় সঙ্কট আরও বাড়ল। অক্সিজেন নেই, হাসপাতালে বেড নেই। তখন আমরা নানা সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে যাদের দরকার, তাঁদের অক্সিজেন সাহায্য দিই। আমাদের এই কাজ দেখে কিছু লোক এগিয়ে এসে আমাদের অর্থ সাহায্য দেয়।  তখন আমরা তাঁদের বলেছিলাম অর্থ নয়, প্রয়োজনীয় জিনিস দিন। অক্সিজেন, মাস্ক, স্যানিটাইজার, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিন। সেই বোঝাপড়ার মাধ্যমেই আমরা প্রয়োজনে মানুষের কাছে জিনিসগুলো পৌঁছে দিতে পেরেছি।‘

তাঁর অভিযোগ, ‘সরকারি বিধির গেঁরোয় অনেকসময় হাসপাতালে ভর্তি নিতেও সমস্যা হয়েছে। রাত আড়াইটে-তিনটে অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিছু জায়গায় শাসক দলেরও প্রভাব ছিল। সরকারি নিয়মের জুজু দেখিয়ে আমাদের অপেক্ষা করিয়েছিল। আসলে একটা দল শূন্য হয়েও মানুষের পাশে এভাবে থাকবে, সাড়া পাবে। সেটাই ওরা মেনে নিতে পারেনি। তাই এখনও তাঁরা প্রচার করে রেড ভলান্টিয়ার আমরা অর্থাৎ তৃণমূল।‘

এলাকা ঘুরে কী দেখছেন? কীসের অভাব?

তিনি বলেন, ’২৮ হাজার শূন্যপদ খালি রয়েছে কলকাতা পুরসভায়। সেখানে দলমত নির্বিশেষে নিয়োগ হোক। এলাকায় স্বচ্ছ পানীয় জলের অভাব রয়েছে। লন্ডনের ভাঁওতা চাই না। বেকারদের চাকরি চাই।‘  

তরুণ মুখকে কী এখন বামেদের সামনের সারিতে দরকার?

প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের তরুণ মুখ সামনেই আছে। বিধানসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা দেখলেই বুঝবেন। আমরা কোথাও হারিয়ে যাইনি, ঘুরে আমরা দাঁড়াবোই।‘ টালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকার ১১৩ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী অজন্তা দাস। রেড ভলান্টিয়ার হিসেবে পরিচিত মুখ। ছাত্র রাজনীতি থেকে ডিওয়াইএফআই নেত্রী। পুরো সময়েই মানুষের পাশে থেকে চাহিদা পূরণের চেষ্টা করেছেন তিনি।

সেভাবেই রেড ভলান্টিয়ার্স হিসেবে করোনাকালে পথে নামা। তবে আসন্ন পুরভোটে বাম প্রার্থী হিসেবে ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখে অজন্তা দাস। প্রচারে বেরিয়ে বিরোধী শিবীর বিশেষ করে শাসক দলের নানা কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। শুনতে হয়েছে ব্যক্তি আক্রমণ। সেই প্রতিকূলতার মধ্যে দাঁড়িয়েও এলাকায় নিকাশি সমস্যা, পরিস্রুত পানীয় জল, জল দাঁড়ানোর মতো সমস্যা সমাধানে মানুষের কাছে যাচ্ছি।  তিনি বলেন, ‘প্রচারে বেরিয়ে সাড়া ভালোই পাচ্ছি। তবে এলাকায় চাপা সন্ত্রাসের আবহ রয়েছে। গত পুরভোটেও সন্ত্রাস, বুথ দখল হয়েছে। আমার নামের দেওয়াল লিখনের উপর ওদের ফ্লেক্স টাঙিয়ে দিয়েছে। ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে ফ্লেক্স।‘

তিনি বলেছেন, ‘তরুণ মুখকে সামনের সারিতে চাইছেন মানুষ। তাঁরাই বলছেন আপনাদের দৌড়নো দরকার। আর আমরা তাই করছি, যখনই প্রয়োজন আমরা ছুটে গিয়েছি।‘   

ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখনটেলিগ্রামে, পড়তেথাকুন

Left Candidate Red Volunteers KMC Poll
Advertisment