Advertisment

মন্দির চত্বরে 'পাড়ায় শিক্ষালয়', সব ধর্মের পড়ুয়ার 'মিলন মেলা' তালতলায়

সব ধর্মের পড়ুয়ারা সামিল 'পাড়ায় শিক্ষালয়ে'। এ যেন সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
NULL

সকল ধর্মের পড়ুয়া আসছে, মিলেমিশে ক্লাস করছে। শহরের হর গৌরি কালী মন্দির চত্বরে চলছে পাড়ায় শিক্ষালয়ের ক্লাস। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

রাজ্যে কমেছে করোনার প্রকোপ। ইতিমধ্যে ৩রা, ফেব্রুয়ারি থেকে খুলেছে স্কুল কলেজ। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে 'পাড়ায় শিক্ষালয়' কর্মসূচী। প্রায় ২ বছর পর স্কুলের মুখ দেখে খুশি কচিকাঁচার দল।  কেউ ক্লাস টু, কেউ থ্রি - অথচ প্রথমবার স্কুলে আসা। অচেনা সহপাঠীকে এই প্রথম সামনে থেকে দেখা, হাতে হাত ধরে বন্ধুত্ব তৈরির পালা।

Advertisment

এমনটাই দেখা গেল তালতলার হরগোবিন্দ মন্দির চত্ত্বরে। সেখানে শীতের রোদ গায়ে মেখে সকাল ১০:৩০ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে 'পাড়ায় শিক্ষালয়ের' ক্লাস। মোট দুটো শিফটে চলছে ক্লাস। প্রথম ক্লাস সকাল ১০:৩০ থেকে ১২:৩০ মিনিট পর্যন্ত। পরের শিফটের ক্লাস দুপুর ১২:৩০ মিনিট থেকে ২:৩০মিনিট পর্যন্ত। এদিন পাড়ায় শিক্ষালয়ের ক্লাসে গিয়ে দেখা গেল হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সকল ধর্মের পড়ুয়ারা একসঙ্গে ক্লাস করছে স্থানীয় একটি কালী মন্দির চত্বরে। অভিভাবকরা অপেক্ষা করছেন কালী মন্দির প্রাঙ্গনেই। মন্দির কমিটিও এমন উদোগ্যে রীতিমত খুশি।

publive-image
পাড়ায় শিক্ষালয়ের দ্বিতীয় দিনে হর গৌরি কালী মন্দির চত্বরে চলছে পাড়ায় শিক্ষালয়ের ক্লাস। একপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

কীভাবে চলবে এই পাড়ায় শিক্ষালয় সে ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন 'শিশুরা যারা এখনও ডোজ নেয়নি, আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখার জন্য। সেখানে তাঁদের পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয় করতে হবে। বৃষ্টির দিনে করা যাবে না। বৃষ্টির দিনগুলি দেখে নিতে হবে। বড় জায়গা থাকলে ভাল। বড় জায়গা না থাকলে গাছের তলায় পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয় হবে। কিন্তু সেটা বৃষ্টির দিনে নয়। হঠাৎ ঝড় জলে বাজ পড়ে কেউ মারা গেল, সেটা যেন না হয়। সেটা শিক্ষকদের দেখে নিতে হবে।’

প্রাক প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পাড়ায় শিক্ষালয়। তিলোত্তমার ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরগৌরি কালী মন্দির! আর সেই মন্দির প্রাঙ্গনেই এখন সকাল থেকেই কচিকাঁচাদের ভিড়। চলছে 'পাড়ায় শিক্ষালয়ের' ক্লাস। তালতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক 'পাড়ায় শিক্ষালয়' প্রসঙ্গে জানান, “প্রতিটি শ্রেণিতে গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন পড়ুয়া আসছে। সকলেই এতদিন পর সহপাঠী, পড়ার পরিবেশ ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি”। তিনি জানান, “সকল ধর্মের পড়ুয়া এখানে আসছে, মিলেমিশে ক্লাস করছে। সেই সঙ্গে আয়োজন করা হচ্ছে মিড ডে মিলের। বাচ্চারা দারুণ ভাবে উপভোগ করছে। এখানে তিনটি হাইস্কুল এবং পাঁচটি প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস হচ্ছে”।

publive-image
নাচের মধ্য দিয়ে পড়াশুনা পাড়ায় শিক্ষালয়ে! একপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

এদিন সকালে গিয়ে দেখা গেল বাচ্চারা প্রবল উৎসাহে পিঠে ব্যাগ নিয়ে এসেছে ক্লাস করতে। নাচে, গানে খেলাধুলায় জমে উঠেছে স্থানীয় মন্দির চত্বর, সঙ্গে অবশ্যই রয়েছে পড়াশুনার পাঠ। স্থানীয় এক 'মিশনারি' স্কুলের শিক্ষিকা সকল পড়ুয়াকে নিয়ে ক্লাস করছেন। পড়াশুনার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য রয়েছে নাচ, গান, খেলা আরও কত কী! বাদ নেই মিড ডে মিলের আয়োজন।

মন্দির দালানে অপেক্ষা করছেন অভিভাবকরা। তবে তাঁদের কথায় কেমন লাগছে এতদিন পর সন্তানদের তাদের জগতে দেখতে? উত্তরে এক অভিভাবক জানালেন "এত দিন ঘরবন্দী জীবন শিশুদের দম যেন বন্ধ হয়ে আসছিল আজ ওরা উন্মুক্ত, খুশিতে বাধনহারা অবস্থা! তবে অনেক অভিভাবকই এই 'পাড়ায় শিক্ষালয়' নিয়ে সরব। তাঁদের কথায় এভাবে খোলা মাঠে ক্লাস বাচ্চাদের পক্ষে কতটা উপযুক্ত তা নিয়ে একটা প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গিয়েছে। এভাবে খোলা মাঠে ক্লাসের থেকে স্কুল খুলে গেলেই ভাল। উঁচু ক্লাস যখন খুলেই গেছে তখন নিচু ক্লাস খুলতে সমস্যা কোথায়'! যদিও সেই সব নিয়ে একটুও মাথা ঘামানোর সময় নেই কচিকাঁচাদের। এতদিন পড়ে নিজেদের জগতে ফিরে বাঁধভাঙা খুশি ধরা পড়েছে পড়ুয়াদের চোখে মুখে।

school in the neighborhood
Advertisment