Advertisment

পুজোর আগেই নয়া ঢেউয়ে ফের 'তছনছ' হবে তিলোত্তমা? জানুন কী বলছেন চিকিৎসকরা

একদিনে ১৫০ শতাংশ সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Kolkata, Kolkata news, West Bengal, West Bengal news, Covid, Covid-19, Covid Kolkata, Covid Wes Bengal, Indian Express, Indian Express news

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এখনই যদি একে আটকানো না যায় তবে পরবর্তীতে, এর প্রকোপে ছারখার হবে বাংলা।

একদিনেই কলকাতায় সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় ১৫০ শতাংশ। বাংলায় করোনার লং-জাম্প দেখে শঙ্কিত চিকিৎসক মহল। তবে কী পুজোর আগেই আরও একটা করোনা ঢেউয়ের অপেক্ষায় বাংলায়? এই প্রশ্নটা’ই বারে বারেই উঁকি দিচ্ছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যে করোনা আক্রান্তের বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু, হত ২৪ ঘন্টায় বাংলায় নতুন করে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা রীতিমত ভয় ধরাচ্ছে। একদিনে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় কাবু হয়েছেন ৭৪৫ জন। গতদিন এই সংখ্যাটাই ছিল ২৯৫।

Advertisment

সংক্রমণ বৃদ্ধির হার প্রায় ১৫০ শতাংশ। কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘন্টায় ৩৩৯।বাংলায় করোনা পজিটিভিটি রেট বেড়ে হয়েছে ৭.৩০ শতাংশ। এতদিন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় আক্রান্তের তুলনায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনাজয়ীর সংখ্যা কম। একদিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৭১ জন।চলতি বছরের শুরুতে করোনার বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল। তবে কয়েক সপ্তাহেই তা রোধ করা গিয়েছিল। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব হয়। বিধিনিষেধ উধাও। ফলে রাস্তাঘাটে ভিড় বেড়েছে। মাস্কস্যানিটাইজার ব্যবহার, দূরত্ব বিধি শিকেয় উঠেছে।

এর ফলেও বেড়েছে সংক্রমণ মনে করছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে তাঁদের মতে যেভাবে এই সংখ্যা বাড়ছে তাতে হাজারের ঘরে সংক্রমণ পৌঁছানো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু কেন মানুষের এই বেপরোয়া মনোভাব? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে দেশের চিকিৎসকরা বারবার সতর্ক করলেও তাঁদের সাবধানবাণীকে উপেক্ষা করে একশ্রেনীর মানুষ বারবার উপেক্ষা করে চলেছে যাবতীয় করোনা প্রোটোকলকে। ফল সেই সংক্রমণ বৃদ্ধি। যা নিয়ে আবারও সরব হয়েছেন চিকিৎসকরা।

বিশিষ্ট চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন ‘আমাদের রাজ্যে দৈনিক টেস্টের সংখ্যা কম। টেস্টের সংখ্যা বাড়ালে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যাটাও সামনে আসবে’। তিনি বলেন, ‘মাস্ক পড়া বন্ধ করে দেওয়া, দুরত্ববিধি না মানা, এসব কিছুই দায়ী সংক্রমণ বৃদ্ধিতে। তাঁর কথায়, “যেকোনও ভাইরাস পৃথিবীতে এলে তাঁর চার পাঁচটা ওয়েভ থাকবেই। করোনা ব্যাতিক্রম নয়। সেও নিজের মত বহমান, তাঁর পরবর্তী ম্যাগনেটিউড যাই হোক না কেন, ওয়েভ কিন্তু আসবেই। আর এই সময় লাগাম না দিলে সত্যিই পুজোর সময় মুশকিল। মানুষ যেভাবে সবকিছু আলগাভাবে নিয়েছিলেন, তাতে করে অবস্থা খারাপ হওয়ারই কথা। করোনা নিজের প্রভাব অন্যত্র দেখাতে শুরু করেছে। এখন, কতদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ফের এর তাণ্ডব চলবে সেটা বলা মুশকিল। তবে এই শিথিলতা ভাল নয়! সরকারের আবারও করোনা নিয়ে নড়েচড়ে বসা উচিত। সমস্ত পরিষেবা আবারও খতিয়ে দেখা উচিত। তার সঙ্গে মানুষের অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত”।

শহরের বুকে আতঙ্ক সবথেকে বেশি। কলকাতাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরাও। শহর কলকাতায় এর আগেও করোনা মহামারীর বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল। এপ্রিলের শুরুতেই জানানো হয়, যে মাস্ক পড়া আর বাধ্যতামূলক নয়। এছাড়াও প্রচন্ড গরমে মাস্ক পড়ে থাকলে শ্বাস নেওয়া দায়, ট্রেনে বাসে কারওর মুখে মাস্ক নেই! অনেক মানুষই নিয়ম মানার অভ্যাস হারিয়েছেন। ফলেই দৈনিক সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে।

আরও পড়ুন: <স্রেফ পাশে বসাতেই ঘুরেছিল ভাগ্যের চাকা, রতন টাটাকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা শিল্পপতির!>

অন্যদিকে বিশিষ্ট চিকিৎসক সুমন পোদ্দারের গলায় আতঙ্কের সুর। তাঁর কথায়, ‘টিকা এবং মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের মাঝে যে কোনও সময়েই উঁকি দিতে পারে বিপদ। তা জানা সত্ত্বেও কিছু সংখ্যক মানুষের বেপরোয়া মনোভাবে চিকিৎসক সমাজ শঙ্কিত। ভিড়েও কিছু শ্রেণীর মানুষ মাস্ক না পরে বেপোরোয়া ভাবেই যাতায়াত করছেন যা অচিরেই ডেকে আনতে পারে বিপদ।

এর মাঝেই ফের করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের সাবধানবানী। বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল চৌধুরি বলেন, “আরও একটা ঢেউয়ের আভাস থাকা সত্বেও মানুষ এখন বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছেন। যার ফলেই সংক্রমণ বেড়েছে অনেকটাই। ট্রেনে বাসে মানুষ মাস্ক পরা প্রায় তুলেই দিয়েছেন। অনেকে আবার হালকা জ্বর সর্দি কাশি নিয়েও অবাধেই মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমাদের মনে রাখা দরকার। আমাদের বাড়ির ছোট সদস্যটিও আমাদের এক ভুলের মাশুল ভুগতে পারে। পুজোর আর ১০০ দিনও বাকি নেই। এরপরেই মানুষ কেনাকাটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। দোকান বাজার শপিং মলে ভড় আরও বাড়বে সেক্ষেত্রে করোনা বিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে ফের আরও একটা ঢেউ অস্বাভাবিক নয়”।

সামনেই দুর্গাপুজো! এবছর পুজো উদযাপন নিয়েও রয়েছে নানা ধরনের প্ল্যান। এদিকে, করোনা সংক্রমন আয়ত্বে না এলে বেজায় মুশকিল। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এখনই যদি একে আটকানো না যায় তবে পরবর্তীতে, এর প্রকোপে ছারখার হবে বাংলা।

চলতি বছরেই করোনার চতুর্থ ঢেউ প্রত্যক্ষ করবে দেশ। আইআইটি কানপুরের ম্যাথমেটিক্স এবং স্ট্যাটিসটিক্স বিভাগের গবেষণায় এমনই সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। উল্লেখ্য, কোভিডের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার সময়কাল প্রথমে আইআইটি কানপুরের তরফেই প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৫ থেকে ৩১ অগাষ্টের মধ্যেই শিখর ছুঁতে পারে সংক্রমণ বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা।

আইআইটি কানপুরের ভবিষ্যতবানীতেই সিলমোহর দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী ডাঃ সৌম্য স্বামীনাথন। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলা সময় তিনি বলেন, “ করোনার আরও একটা ছোট ঢেউয়ের সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই তা এই পরিস্থিতিতে বলা যাচ্ছে না। রোজই বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অ্যাকটিভ আক্রান্তের সংখ্যাও। এমন পরিস্থিতিতে বয়স্কদের বুস্টার ডোজ যে বাধ্যতামূলক সেকথা আরও একবার মনে করান তিনি। তিনি বলেন, ৬০ বছরের ওপরের সকলের বুস্টার ডোজ গ্রহণ এবং সঙ্গে যাবতীয় কোভিড বিধি মেনে চলা দেশে পরবর্তী ঢেউকে আটকাতে পারে। সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কে সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। ডব্লিউএইচও প্রধান বিজ্ঞানী আরও মনে করেন অনেকে বাড়িতেই করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন সেক্ষেত্রে সংখ্যার হের-ফের হওয়া স্বাভাবিক। পাশাপাশি আমাদের হাসপাতালে ভর্তি এবং সার্বিক মৃত্যুহারের ওপর বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন”

kolkata corona Kolkata corona expert opinion
Advertisment