বিধ্বংসী আগুনে মর্মন্তুদ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৯ জনের। তার মধ্যে ফায়ার ব্রিগেডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ অফিসারও আছেন। দোষারোপ পাল্টা দোষারোপও শুরু হয়ে গিয়েছে। ভবনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, ফায়ার অ্যালার্ম-সহ নানা পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি লিফ্ট দিয়ে ওপরতলায় ওঠার সিদ্ধান্ত ও ইলেক্ট্রিক চালিত লিফ্ট কীভাবে সচল ছিল তা নিয়েই যাবতীয় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বহুতল এই ভবনে ফায়ার লিফ্ট থাকলে এধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মহানগরের স্ট্র্যান্ড রোডে রেলের কয়লাঘাটের ১৩তলায় আগুন লাগার ঘটনায় এভাবেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে তা কেউ কল্পনা করতে পারেননি। কিন্তু আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে যে ভাবে লিফ্টের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কেন লিফ্ট ব্যবহার করা হল? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে স্পষ্ট ওই লিফ্ট ছিল বিদ্যুৎ চালিত। তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অবাক হয়েছেন অনেকেই।
রাজ্যের বিদ্যুতমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "এতবড় দুর্ঘটনায় ভবনের পথ দেখানোর জন্য রেলের কোনও লোক ছিল না। এদিক থেকে রাস্তা আছে, ওদিক থেকে রাস্তা আছে এসব বলার জন্য কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি।" তবে কেন বিদ্যুৎ চালিত লিফ্ট চালু ছিল তা বলতে পারেননি মন্ত্রী। শোভনদেববাবু বলেন, "এ বিষয়ে সিইএসসির কাছে খোঁজ নিচ্ছি।" তবে ১৩ তলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল বলে তিনি জানান। বিধ্বংসী অগ্নিকান্ডের সময় বিদ্যুতের লাইন চালু থাকায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। রেলমন্ত্রী রেলের অসহযোগিতার অভিযোগ আগেই উড়িয়ে দিয়েছেন।
এভাবেও যে প্রাণ যেতে পারে তা মেনে নিতে পারছেন না অগ্নিনির্বাপক বিশেষজ্ঞরাও। দমকল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর অসিত কুমার সরকার বলেন, "বহুতল ভবনে দু'ধরনের লিফ্ট থাকে। সাধারণের জন্য ব্যবহৃত লিফ্ট, অন্যটা ফায়ার লিফ্ট। ফায়ার লিফ্টের কনস্ট্রাকশন সিস্টেম, মেকানিজম, সমস্ত কিছু আলাদা। বিদ্যুৎ ছাড়া নিজস্ব জেনারটর সিস্টেম থাকে। ভিতর থেকে যে কোনও অবস্থায় বন্ধ করা যেতে পারে। এর দেওয়ালগুলো থাকবে দু'ঘন্টা অগ্নি প্রতিরোধক ন্যায়। এর কনস্ট্রাকশন ফিচার, ওয়ে আউট সব আলাদা। সত্যি ফায়ার লিফ্ট থাকলে এই ধরনের বিপর্যয় হওয়া উচিত নয়।"
প্রাক্তন দমকল আধিকারিক এই ঘটনায় বিচলিত। হতবাক হয়েছেন সোমবার রাতের ঘটনায়। যাঁরা লিফ্ট দিয়ে উঠেছেন তাঁরা যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়, তাও না। অসিতবাবু বলেন, "গিরীশ দে কমপিটেন্ট অফিসার। স্পেশাল ফায়ার ফাইটিং-সহ যাবতীয় ট্রেনিং নিয়েছে সে। তবে কী করে ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কিছুতেই বুঝতে পারছি না। প্রথমত অনুমান, তারপর আত্মবিশ্বাস। পরে তার প্রয়োগ। তাড়াতাড়ি পৌঁছে কাজ করতে হবে এই ভাবনায় পরিস্থিতি বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। এটা একটা চরম ভুল। ইলেক্ট্রিকের পয়েন্ট সব কাট-আপ করা হয়নি। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিদ্যুৎচালিত লিফ্ট বন্ধ করতেই হবে। কোনভাবেই ওই লিফ্ট ব্যবহার করা যাবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তেমন ব্যবস্থা ছিল না। যাতে আগাম সতর্কতামূলক ভাবে সব কিছু বন্ধ করতে পারত।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন