অঙ্গে ক্রিম রঙের পোশাক, সারা গায়ে রক্তস্নানের লক্ষণ, হাতে নানান বক্তব্যের প্ল্যাকার্ড। মাংস খাওয়ার অর্থ প্রাণীহত্যা? তাই নিরামিষাশী হতে হবে! ঠিক এমনটাই দাবি পিপল ফর দ্য এথিকাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিমাল ( PETA ) গ্রুপের সদস্যদের। আগামী ১ নভেম্বর বিশ্ব ভেগান দিবসের উদযাপন উপলক্ষেই শুক্রবার কলকাতায় প্রতিবাদ তাঁদের।
শুক্রবার, কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সামনেই মাটিতে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে প্রাণীহত্যার বিরুদ্ধে সরব হতেই একত্র হন তাঁরা। এই প্রখর সূর্যের তেজে শুধু দাঁড়িয়েই খান্ত হননি বরং এক বালতি করে রক্তের মতো দেখতে লাল রঙ ঢেলে নেন নিজেদের গায়ে। যদিও তাদের এবারের উদ্যোগের নামেই রয়েছে 'ব্লাড বাথ'। প্রতীকি রক্তের মাধ্যমেই তাঁদের বক্তব্য শুধু একটিই, মাংস খাওয়া বন্ধ করুন, নিরামিষ-ভোজী হন ( মিট ইস মার্ডার, ট্রাই ভেগান )
মানুষ খাবারের নামে নিরপরাধ প্রাণীদের হত্যা করছে এবং এই নিয়েই তাঁদের মানুষের উদ্দেশ্যে আপত্তির সুর। যে প্রাণী স্বেচ্ছায় মরে যেতে ইচ্ছুক নয় তাদেরকে শুধু মানুষের খিদে নিবারণ করতে হবে বলেই নাকি অকালেই প্রাণ ত্যাগ করতে হচ্ছে, ঠিক এমনটাই দাবি পেটার সিনিয়র কাম্পেইন কোঅর্ডিনেটর রাধিকা সূর্যবংশীর। তিনি বলেন, সকলে মিলে একত্রে প্রাণীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব। এমনকি নিজেদের প্রতিদিনের জীবনেও নিরামিষ আহার বেছে নিলেও নাকি সুস্থ থাকা সম্ভব, শুধু বদল আনতে হবে।
তাঁদের বক্তব্য, প্রতি একজন মানুষ যদি আমিষ খাদ্য গ্রহণ করা বন্ধ করেন তাহলে প্রায় ২০০ প্রাণীহত্যা হওয়া থেকে মুক্তি পেতে পারে। শুধুই মাংস নয়, ডিম থেকে দুধ সব কিছুতেই প্রাণীদের ক্ষতিই বড়। তাদের নিজস্ব স্বাধীনতা যেমন নেই, তেমনই জন্মের পরে মায়ের থেকে শাবককে আলদা করে দেওয়া হয় কেবলমাত্র মানবজাতির যাতে দুধের সমস্যা না হয় এই কারণে! সর্বসাকুল্যে মানুষের শারীরিক অসুস্থতা যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ জনিত সমস্যা এবং ডায়াবেটিসের সঙ্গে মাংসের ক্ষতিকারক যোগ এমনও নির্দেশ মিলেছে। 'প্রাণীরা আমাদের খাবারের বস্তু নয়' - এই কর্মসূচি নিয়েই তাদের নতুন পদক্ষেপ।
কিন্তু, তারপরেও প্রকৃতির ভারসাম্যের প্রশ্ন থেকেই যায়। খাদ্য খাদক সম্পর্কের চিরাচরিত বিষয় প্রসঙ্গ পৃথিবীর শুরুর দিন থেকেই বহমান। বনের প্রাণী নিশ্চয়ই কোনওভাবে মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকবে না। এবং জীবতন্ত্রে বেঁচে থাকতে গেলে, শরীরে সবকিছুর প্রয়োজন আছে। তথাকথিত ভাষায়, নিরামিষ খাবারের অর্থ উদ্ভিদের প্রাণ নিয়ে টানাটানি। যেখানে দাঁড়িয়ে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর উদ্ভাবন অনুযায়ী, উদ্ভিদের প্রাণ আছে এবং তারাও ব্যথা যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে। তাহলে কি এটিও একরকম প্রাণীহত্যা নয়?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন