দশজনের মধ্যে একজন ভারতীয় নিজেদের জীবদ্দশায় ক্যান্সারের কবলে পড়বেন, এবং এই মারণরোগে মৃত্যু হবে ১৫ জনের মধ্যে একজন ভারতীয়ের। তাদের সদ্য প্রকাশিত একটি রিপোর্টে আশঙ্কাজনক এই খবর শুনিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা WHO)।
আজ, ৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ক্যান্সার দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই উপলক্ষ্যে দুটি বিশ্বব্যাপী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০১৮ সালে সংগৃহীত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রস্তুত ভারতে ক্যান্সারের বোঝা এবং ধরন সংক্রান্ত এই রিপোর্ট বলছে, গত বছর ভারতের মোট ১.৩৫ বিলিয়ন (১৩৫ কোটি) জনসংখ্যার মধ্যে নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন ১.১৬ মিলিয়ন (১১.৬ লক্ষ) জন, মৃত্যু হয়েছে ৭ লক্ষ, ৮৪ হাজার ৮০০ জনের, এবং পাঁচ বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছেন ২.২৬ মিলিয়ন (২২.৬ লক্ষ) মানুষ।
এই রিপোর্টের উদ্দেশ্য হলো ক্যান্সারের মোকাবিলায় বিশ্বের কার্যাবলী নির্ধারণ করা, বিভিন্ন অংশীদারদের চাগিয়ে তোলা, এবং ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে কোন দেশ কত বিনিয়োগ করবে, তা বুঝতে তাদের সাহায্য করা।
এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ২০১৮ সালে ভারতে যে ছ'টি ধরনের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, সেগুলি হলো স্তন (ব্রেস্ট) ক্যান্সার (১ লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০), মুখ-গহ্বরের (ওরাল) ক্যান্সার (১ লক্ষ ২০ হাজার), সার্ভিকাল (জরায়ু-মুখ) ক্যান্সার (৯৭ হাজার), লাং (ফুসফুস) ক্যান্সার (৬৮,০০০), পেটের ক্যান্সার (৫৭ হাজার) এবং কোলরেকটাল ক্যান্সার (২০ হাজার)। এই ছ'রকম ক্যান্সার একত্রিত করলে দাঁড়াচ্ছে নতুন করে আক্রান্তদের ৪৯ শতাংশ।
গত বছরের আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন ৫.৭০ লক্ষ পুরুষ, যাঁদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে ৪৫ শতাংশই মুখগহ্বরের ক্যান্সার (৯২ হাজার), ফুসফুসের ক্যান্সার (৪৯ হাজার), পেটের ক্যান্সার (৩৯ হাজার), কোলরেকটাল ক্যান্সার (৩৭ হাজার), বা ইসোফেগাসের (অন্ননালী) ক্যান্সারে ভুগছেন। মহিলা রুগীর মোট সংখ্যা ৫.৮৭ লক্ষ, যাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশই ভুগছেন স্তন ক্যান্সার (১ লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০), জরায়ু-মুখের ক্যান্সার (৯৭ হাজার), ওভারিয়ান (ডিম্বাশয়) ক্যান্সার (৩৬ হাজার), মুখগহ্বরের ক্যান্সার (২৮ হাজার), বা কোলরেকটাল ক্যান্সারে (২০ হাজার), বলছে রিপোর্ট।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলেই পুরুষদের মধ্যে ৩৪-৬৯ শতাংশ, এবং মহিলাদের মধ্যে ১০-২৭ শতাংশ ক্যান্সারের মূলে রয়েছে তামাক-জাত দ্রব্য। পুরুষদের মধ্যে মুখগহ্বরের ক্যান্সারের বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে, সম্ভবত পান মশলার মতো চিবিয়ে খাওয়ার তামাকজাত দ্রব্য, যাতে সুপুরি থাকে, সেগুলি অতিরিক্ত সেবন করার ফলে। এই প্রসঙ্গে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক পঙ্কজ চতুর্বেদী বলেছেন, ধোঁয়া-বিহীন তামাকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া দরকার প্রতিটি রাজ্যের।