Advertisment

পশ্চিমবঙ্গে আজ ওদের স্বাধীনতা দিবস নয়

কেউ ১৫ অগাস্টের পর জাতীয় পতাকা তোলার সাহস পেতেন না, তাঁদের ধারণা ছিল, ‘লোকে কী ভাববে’, এই সঙ্কোচেই গুটিয়ে ছিলেন গ্রামবাসীরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্ট নয়। আজ তারা ভারতবর্ষের অঙ্গ হলেও সেদিন তারা ভারতের মানচিত্রে ছিল না। তাই এই দিনটা তাদের জন্য নয়। কিন্তু কেন? সে এক দীর্ঘ ইতিহাস।

Advertisment

১২ অগাস্ট, ১৯৪৭। ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করলেন, ১৫ অগাস্ট থেকে স্বাধীন হয়ে যাবে ভারত। কিন্তু গোল বাঁধল বাংলাকে নিয়ে। তার কারণ, মাত্র দেড় মাসের মধ্যে দেশভাগ-পরবর্তী মানচিত্র তৈরি করার দায়িত্বে ছিলেন যে সিরিল র‍্যাডক্লিফ, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের (পরে বাংলাদেশ) ভাগে দিয়ে দিয়েছিলেন মালদা এবং নদীয়ার মতো বাংলার হিন্দু অধ্যুষিত জেলা। এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের অগাধ বৈচিত্র্য এবং জটিল সামাজিক ও ধর্মীয় সমীকরণ সম্বন্ধে তাঁর অজ্ঞতা, এবং কিছুটা দায়ী ছিল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ইংল্যান্ডে ফেরার তাড়া, যার ফলে তিনি ক্রমাগত দ্রুত দেশভাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করে চলেছিলেন র‍্যাডক্লিফের ওপর।

ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, মাউন্টব্যাটেনের ঘোষণার ফলে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে গোটা অঞ্চলে। এখানকার বাসিন্দারা ১৫ অগাস্টকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন। পূর্বপুরুষদের মুখে শোনা গল্প উদ্ধৃত করে বর্তমান প্রজন্মের বাসিন্দারা বলেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো রাজনৈতিক নেতা এবং নদীয়ার রাজপরিবারের সদস্যরা তাঁদের প্রতিবাদ নিয়ে হাজির হন কলকাতায় ব্রিটিশ প্রশাসনের দরবারে, এবং মাউন্টব্যাটেনের কানে খবর পৌঁছয়। তড়িঘড়ি মানচিত্র বদলানোর আদেশ দেন ভাইসরয়, যাতে হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি ভারতেই থাকে, এবং মুসলমান অধ্যুষিত জেলা যায় পূর্ব পাকিস্তানে। এই প্রক্রিয়া শেষ হয় ১৭ অগাস্ট গভীর রাতে।

ভারতের ইতিহাসের এই অপেক্ষাকৃত অখ্যাত ঘটনার উদযাপন আজও হয়ে চলেছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে কিছু গ্রামে। ১৫ অগাস্টের বদলে ১৮ অগাস্ট এখানে পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস, এবং এই মুক্তি স্রেফ ব্রিটিশদের হাত থেকে নয়, পূর্ব পাকিস্তানের হাত থেকেও, এমনটাই ভাবা হয় এখানে। কারণ এই সেই দিন, যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে যোগ দেয় গ্রামগুলি। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।মুর্শিদাবাদের কিছু বিশিষ্ট মানুষ যেমন নবাব কাজেম আলী মির্জা, তৎকালীন লালগোলা রাজা ধীরেন্দ্র নারায়ন রায় ও তার পুত্র বিরেন রায়, নশিপুর এর তৎকালীন রাজা ও বেশকিছু বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী র তৎপরতায় পরে মুর্শিদাবাদকে ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮ ই আগস্ট সকাল ৯টায়, লালগোলার এম.এন.একাডেমীর মাঠে অবস্থিত বট গাছের কাছে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়।

নদীয়ার ছোট্ট গ্রাম শিবনিবাস গ্রামের সবাই পুরুষানুক্রমে জানেন স্বাধীনতা দিবস কেন ১৮ অগাস্ট ধার্য হয়েছিল, কিন্তু প্রথমে দিনটি সেভাবে উদযাপিত হতো না।  কেউ ১৫ অগাস্টের পর জাতীয় পতাকা তোলার সাহস পেতেন না, তাঁদের ধারণা ছিল, ‘লোকে কী ভাববে’, এই সঙ্কোচেই গুটিয়ে ছিলেন গ্রামবাসীরা। অথচ ১৫ আগস্ট তারা স্বাধীন হয়নি।

অন্যদিকে উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁ শহরেও ১৫ আগস্ট পতাকা উত্তোলন হত। কিন্তু পরবর্তীকালে ইতিহাসকে সামনে নিয়ে আসে তারা, আজ থেকে ১১ ১২ বছর আগে।  ১৮ অগাস্ট জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয় বনগাঁ বার অ্যাসোসিয়েশন। বনগাঁ মহকুমা স্বাধীনতা পায় ১৮ অগাস্ট, ১৯৪৭, সকাল সাড়ে দশটায়।

Independence Day
Advertisment