ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত বারোটা। ভোর হতে ঢের বাকি, অথচ সারা দেশ হাতে হাত রেখে অপেক্ষা করছে একটা নতুন সূর্যের জন্য। ৭২ বছর আগের এক ভোরে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। মধ্যরাতেই দিল্লির লাল কেল্লা থেকে তেরঙা ওড়ালেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। সাত দশক ধরে সেই রেওয়াজই মানা হচ্ছে ১৪ আগস্ট মাঝ রাতে। ১৫ মানেই লক্ষ লক্ষ আবেগ এক হওয়ার দিন। আচ্ছা, মনে প্রশ্ন জাগে না, হঠাৎ এই দিনটাকেই কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল স্বাধীনতার দিন হিসেবে? একটু পেছনে হাঁটা যাক তাহলে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে মাউন্টব্যাটেনকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ১৯৪৮ এর জুন মাসের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই হবে। এ প্রসঙ্গে সি রাজাগোপালচারী বলেছিলেন, জুন ১৯৪৮ পর্যন্ত অপেক্ষা করলে মাউন্টব্যাটেনকে নতুন করে আর কোনও ক্ষমতাই অন্য কারোর হাতে তুলে দিতে হত না। পরিস্থিতি বুঝে মাউন্টব্যাটেন নিজেই ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এগিয়ে আনেন অনেকটা। প্রায় বছর খানেক।
নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছুটা আগেই ভারত ছেড়ে চলে যাবেন, অথচ তার সপক্ষে জুতসই সাফাই দেবেন না, তা কী হয়? স্বভাবতই মাউন্টব্যাটেনের যুক্তি ছিল, হঠাৎই স্বাধীনতার দিনক্ষণ ঘোষণা হলে বাড়াবাড়ি রকমের হিংসা-রক্তপাত ঘটার সুযোগই আসবেনা। আদতে তা হল না। ঠেকানো গেল না মৃত্যু-হত্যার মিছিল। তৎক্ষণাৎ মাউন্টব্যাটেনের বক্তব্য পাল্টে গেল। বললেন, "যেকোনো ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হলে, তার মূল্য তো দিতেই হবে, একটু আধটু রক্তপাত হবেই।"
সাত তাড়াতাড়ি ১৯৪৭-এর ৪ জুলাই প্রস্তাবিত হল 'ভারত স্বাধীনতা বিল'। পাশ হল দিন পনেরোর মধ্যে। আর এই বিলের মধ্যে দিয়েই এল বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ১৫ আগস্ট ১৯৪৭। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হল ভারত এবং পাকিস্তান। বিচ্ছিন্ন হল নিজেরাও। চিরকালের মতো কাঁটাতারের দুই দিকের মধ্যে সেঁটে গেল 'প্রতিবেশী রাষ্ট্র'- এর তকমা।