সকলেরই মনে কিছু না-কিছু বাসনা রয়েছে। কেউ প্রকাশ করেন। কেউ করেন না। মনের মধ্যেই গুমরে মরেন। সেই, পূরণ না-হওয়ার ইচ্ছাটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে মনের মধ্যেই থেকে যায়। কিন্তু, হিন্দুশাস্ত্রে ইচ্ছাপূরণের নানা বিধি আছে। একটু যদি কষ্ট করে নিয়মটুকু মানতে পারলেই, পূরণ হতে পারে আপনার দীর্ঘদিনের অতৃপ্ত বাসনা। আর, এবার সেই সুযোগ চলে এসেছে। কারণ, এক বিশেষ তিথি রয়েছে এর মধ্যে। যাতে আপনার বাসনা পূরণ হতে পারে বিধি মানলে।
আর, সেই বিধিও বিশেষ কঠিন কিছু নয়, অত্যন্ত সরল। কিন্তু, বেশিরভাগই মানুষই শাস্ত্র নিয়ে তেমন চর্চা করেন না, তাই এসবের খোঁজও পান না। অবশ্য অনেক শাস্ত্রবিদ জানাতেও চান না নানা কারণে। বিশেষ করে এই সুযোগে কেউ যদি কারও অপকার করে সেই ভয়ে। সেই কারণে মনে রাখা প্রয়োজন, যাঁরা মনস্কামনা পূরণ করতে চান, তাঁদের মনও উদার হওয়া উচিত। আর, হাজারো মনস্কামনার বদলে নির্দিষ্ট একটি মনস্কামনা পূরণেরই চেষ্টা করা উচিত এই বিশেষ তিথিতে।
সেই বিশেষ তিথি হল রবিবার, ২০ নভেম্বর। ওই দিন রয়েছে উৎপন্না একাদশী। আর, তার পারণ রয়েছে পরদিন সকাল ৬টা ১৬ থেকে সকাল ৯টা ৫৪-এর মধ্যে। এটুকু পড়ে প্রশ্ন জাগতে পারে, হঠাৎ উৎপন্ন একাদশীতে আবার কী হল! আসলে এই একাদশী তিথিতে বিষ্ণুর পরাশক্তি থেকে উৎপন্ন হয়েছিল এক দেবী। সেই কারণে এই একাদশীকে উৎপন্না একাদশী বলে। সেই দেবী সত্যযুগে মূর নামে এর দানবকে হত্যা করেছিলেন। শ্রীবিষ্ণুকে রক্ষা করেছিলেন।
শ্রীবিষ্ণুর আশীর্বাদে তিনি সর্ববিঘ্ননাশিনী ও সর্বদায়িনী। শ্রদ্ধাসহকারে এই দেবীর ব্রত-উপবাস করলে তাঁদের সর্বসিদ্ধি লাভ হয়। সকল মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এই দেবী হরিপ্রিয়া নামেও পরিচিত। তিনি ব্রতপালনকারীর শত্রুবিনাশ করেন। পরমগতি দান করেন। সর্বসিদ্ধি প্রদান করেন। এই সব সুফল পেতে গেলে উৎপন্না একাদশী সময়সূচি মেনে পালন করতে হবে। তার পারণও সময়সূচি মেনে পালন করতে হবে। তার আগের দিন থেকে অর্থাৎ দশমী এবং দ্বাদশীতে নিরামিষ আহার খেতে হবে। দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সংকল্প করতে হবে যে, 'হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামিকাল একাদশী নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে পারি।'
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ইং ২০ নভেম্বর ২০২২ রবিবার উৎপন্না একাদশী। ওই দিন ভোরে স্নান সেরে ভগবানের সম্মুখে সংকল্প মন্ত্র পাঠ করবেন। পারণ, অর্থাৎ উৎপন্না একাদশীর পরের দিন অর্থাৎ সোমবার সকাল ভোরে স্নান সেরে পারণ মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের প্রতি অর্পণ করবেন। নচেৎ একাদশীর পূর্ণ ফললাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন।
আরও পড়ুন- কলকাতার এই মন্দির, যেখানে আকুতিতে ফেরান না ভগবান, এমনই বিশ্বাস ভক্তদের
উৎপন্না একাদশী সংকল্প মন্ত্র, যা একাদশীর দিন ভগবান কৃষ্ণের সম্মুখে সংকল্প নেওয়ার সময় বলতে হবে, তা হল– 'একাদশ্যাম্ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি। ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরণম্ মে ভবাচ্যুত।। অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যুত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।'
উৎপন্না একাদশীর পারণের মন্ত্র সঠিকভাবে বলতে হবে। একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর অর্থাৎ, উপবাসের পরদিন সকালে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করতে হবে। একাদশীর পারণ মন্ত্র তিনবার ভক্তিভরে পাঠ করতে হয়। এরপর প্রসাদ গ্রহণ করতে হবে। একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ— 'অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব। প্রসীদ সুমুখনাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥ অনুবাদ: হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।'