কালী প্রতিমার উচ্চতা ১৪ ফুট। মানে বিরাট বড় আকারের ঠাকুর। কিন্তু, নৈহাটির বড়মার অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ তাঁর এই উচ্চতাকেও হার মানায়। আর, এই কারণে, প্রতিবছর এরাজ্য তো বটেই, ভিনরাজ্য এমনকী ভিনদেশ থেকেও কালীপুজোয় বা বড়মার পুজোয় যোগ দিতে আসেন অসংখ্য ভক্ত। বড়মার পুজো ছাড়াও নৈহাটিতে বেশ কয়েকটি কালীপুজো হয়। কিন্ত, সবকিছু ছাপিয়ে দর্শকদের কৌতূহল থাকে এই বড়মার পুজোকে ঘিরেই।
কারণ, ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী বড়মা অত্যন্ত জাগ্রত। সাধারণ রূপে দেবী রক্ষাকালী রূপে পরিচিত। তাঁর সেই রূপ যেন অগণিত ভক্তের কাছে আক্ষরিক অর্থেই বাস্তবোচিত হয়ে উঠেছে। নৈহাটি স্টেশন থেকে পশ্চিমদিকে ঋষি অরবিন্দ রোড ধরে গঙ্গার দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বড়মার শতবর্ষ ছুঁইছুঁই পুজো। যে পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। বড়মার নামকরণের কারণ এই ইতিহাসই অগণিত ভক্তের কাছে জানান দেয়।
কথিত আছে নৈহাটির বাসিন্দা ভবেশ চক্রবর্তী তাঁর বন্ধুদের নিয়ে একবার নবদ্বীপে গিয়েছিলেন ভাঙা রাস দেখতে। সেখানে প্রতিমার আকার দেখে তিনি ঠিক করেছিলেন, বাড়িতে একই আকারের কালীমূর্তি নিয়ে আসবেন। আর, তার পুজো করবেন। সেইমতো চক্রবর্তী বাড়িতে সেই পুজো শুরুও হয়। কিন্তু, প্রতিবছর প্রতিমার আকৃতি বৃদ্ধির ফলে আর বাড়িতে এই পুজো করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন- ভক্তরা বলেন ‘গুপ্ত সতীপীঠ’, এতটাই জাগ্রত দক্ষিণ দিনাজপুরের বুড়িমা কালী মন্দির
ঋষি অরবিন্দ রোডের পাশেই তাই প্রতিমা বানিয়ে পুজো করার চল শুরু হয়। এলাকার প্রবীণদের দাবি, বড়মার প্রতিমার উচ্চতা প্রায় ১৪ ফুট। যদিও এই ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে। অনেকের মতে আবার বাইশ ফুটের প্রতিমা। যার নির্মাণকাজ রীতি মেনেই শুরু হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সময় থেকে। শুরুতে এই কালীর নাম ভবেশ কালী থাকলেও। পরে অলৌকিক ক্ষমতার কারণে ভক্তদের কাছে বড়মা নামে পরিচিতি পায়।
তবে, আজও চক্রবর্তী বাড়িতেই তৈরি হয় প্রতিমার ভোগ। সেবকরা পুজোর খরচা বহন করেন। বছরের বাকি দিনগুলোতে পুজো চলে নৈহাটির বড়মা মন্দিরে। শ্যামাপুজোয় ভক্তদের দানের গয়নায় সেজে ওঠেন বড়মা। এলাকাবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে বিসর্জনের দিন প্রথমে বড়মার মূর্তি ভাসান দেন। তারপর অন্য সব প্রতিমার বিসর্জন হয়। ১৯৭০ সাল অবধি এলাকার শক্তিশালী যুবকরাই বড়মাকে কাঁধে করে বিসর্জন দিতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু, দেবীর উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে থাকায় এখন সেই রীতি বদলেছে।