বৈষ্ণব মতে যেমন হোলি, শৈব মতেও কিন্তু, এই দোলপূর্ণিমাকে কেন্দ্র করেই রঙের উৎসবের এক দীর্ঘ কাহিনি আছে। কিন্তু, তাতে কোনও হোলি শব্দ নেই। সেটা আবিরে রাঙিয়ে দেওয়া। এককথায় ফাগ উৎসব। কী সেই কাহিনি?
কথিত আছে, বর্তমান ভারতের গোয়া অঞ্চলে এককালে দেবী শক্তি (দুর্গা) অবতীর্ণ হয়েছিলেন মহালসা রূপে। পরে মহালসা পুনরায় দেবীত্ব প্রাপ্ত হলে কৈলাসে ফিরে যান। কিন্তু, দেবীর মায়ের কাছে তিনি শুধুই মহালসা। কোনও দেবী নন। মেয়েকে দেখতে তাঁর মা কৈলাসে গেলে দেবরাজ ইন্দ্র দেবীর মাকে অপমান করেন। মা যেহেতু সব কিছুর ঊর্ধ্বে, তাই দেবরাজের এই আচরণে চরম ক্ষুব্ধ হন মহাদেব। তিনি নিজেকে সামলে নিলেও ইন্দ্র কিন্তু দমেন না। তিনি অহঙ্কারের বশে ফের দেবী মহালসার মাকে অপমান করেন। এতে ক্ষুব্ধ মহাদেব অত্যন্ত রুষ্ট হন। তাঁর চোখ থেকে ক্রোধাগ্নি বের হয়। দেবী দুর্গা তাঁকে সামলান। এতে মহাদেবের ক্রোধাগ্নি গিয়ে পড়ে সমুদ্র দেবের কাছে। যা রূপ নেয় জলন্ধরের।
ইন্দ্র হয়তো বেঁচে যান। কিন্তু, এতে সৃষ্টি হয় বিপত্তি। বেচেঁ যায়। জলন্ধরকে সমুদ্রদেব যথাসম্ভব ভালো করে পালন করার চেষ্টা করলেও দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের প্রভাবে জলন্ধরের স্বভাবে অসুরত্বের জন্ম হয়। ফলে জলন্ধর ইন্দ্রের অমরাবতী আক্রমণ করেন। স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল দখল করে রাজত্ব শুরু করেন। কিন্তু, তিনি নিজের জন্মের কাহিনি জানতেন না। দেবী পার্বতীর রূপের বর্ণনা শুনে তিনি দেবীকে পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠেন। আর কৈলাস আক্রমণ করেন। যার জেরে তাঁর প্রাণ যায়। কিন্তু, দেহত্যাগের আগে তিনি শিবজ্ঞান লাভ করেন। তার জেরে সকলের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেন। আর, সসম্মানে মৃত্যু বরণ করেন।
আরও পড়ুন- ‘হোলিকা’কে পুড়িয়ে বিজয়ের উৎসব ‘হোলি’তে মেতে ওঠে অবাঙালি
পুরাণ অনুযায়ী, মৃত্যুকালে জলন্ধর বলেছিলেন, 'আমার একান্ত ইচ্ছা, সকলে জীবনের রং অনুভব করুক। আর আমার এই মৃত্যুর দিনই হোক সকলের জীবনে রঙের উৎসবের দিন।' মৃত্যুকালে জলন্ধরের বলা এই ইচ্ছাকে মর্যাদা দেন মহাদেব ও মহাদেবী। তাঁর ইচ্ছা অনুসারে জলন্ধরের মৃত্যুর দিনটি রঙের উৎসব হিসেবে পালিত হয়। আর, এই বিশেষ দিনটিতে রয়েছে ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথি।