শেষ হল বাংলার পাঁচ দিনব্যাপী 'বঙ্গ কুম্ভমেলা'। ১০ ফেব্রুয়ারি এই মেলা শুরু হয়েছিল। শেষ হল ১৪ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার। একদা বাণিজ্য সমৃদ্ধ বাংলার সপ্তগ্রাম ছিল প্রচলিত বন্দর। তার ত্রিবেণী গঙ্গা-যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল। একইসঙ্গে ঘোষিত হিন্দুতীর্থ। যা পরিচিত ছিল 'মুক্তবেণী' নামে। গঙ্গাসাগর মেলা শেষে সাধু-সন্ন্যাসীরা চলে যেতেন ত্রিবেণীতে। পৌষ সংক্রান্তির গঙ্গাসাগর থেকে মাঘ সংক্রান্তির কুম্ভমেলায় যোগ দিতে।
৭০৪ বছর আগে শেষবার এখানে কুম্ভমেলা হয়েছিল। সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ফের মেলা শুরু হল। হুগলির ত্রিবেণীর উলটোদিকেই নদিয়ার কল্যাণী। গঙ্গার দুই পারেই কুম্ভস্নানের জন্য ভক্তরা দলে দলে যোগ দিয়েছিলেন। গঙ্গাসাগর ফেরত সাধুরাও এসেছিলেন মেলায়।
মাঘ সংক্রান্তি ছিল গতকাল, অর্থাৎ সোমবার। ওই দিনই কুম্ভের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শাহি স্নানের ব্যবস্থা করা হয় গঙ্গার দুই পাশেই একাধিক ঘাটে। সকাল ১০টার পর সাধুদের শোভাযাত্রা ঘাটে পৌঁছয়। ১১টা থেকে শাহি স্নান করেন সাধুরা। তাঁদের স্নান শেষ হওয়ার পর পুণ্যার্থীরা সেখানে পুণ্যস্নান করেন। পাশাপাশি মহা রুদ্রযজ্ঞেরও আয়োজন করা হয়েছিল। ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও। সাধুদের জন্য ভোজনের পাশাপাশি, মেলায় পুণ্যার্থীদের মধ্যেও প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- দেবী মনস্কামনা অপূর্ণ রাখেন না, ৫০০ বছরের প্রাচীন মন্দির সম্পর্কে বিশ্বাস ভক্তদের
মেলা চলাকালীন ত্রিবেণী এবং কল্যাণীর মধ্যে ফেরি চলাচল ছিল নিয়মিত। পাশাপাশি, যেহেতু গঙ্গার এপার ও ওপার, সেই জন্য কল্যাণীতেও এই মেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কল্যাণীর মাঝেরচর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু ফেরিঘাটে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ঘোড়ায় টানা রথের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যাতে চেপে নাগা সাধুরা কল্যাণী শহর পরিক্রমা করেন। একইসঙ্গে এই মেলার আকর্ষণ বাড়াতে হাতি আনার কথা ছিল। কপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টিরও কথা ছিল। কিন্তু, সেসব শেষ পর্যন্ত হয়নি।
মেলায় পুণ্যার্থীদের যাতায়াতে যাতে কোনও বিঘ্ন না-হয়, সেজন্য প্রশাসন ছিল সতর্ক। মেলার মধ্যেও রক্ষীদের টহলদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাশাপাশি, ঘণ্টার ঘাটগুলোতেও দুর্ঘটনা এড়াতে ছিল বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা।