অকালিপুরের গুহ্য কালী মন্দির। তারাপীঠ মন্দির থেকে যার দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। বীরভূমের নলহাটিতে এই মন্দির। নলহাটি শহর থেকে এই জায়গার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। নলহাটির ভদ্রপুর গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে অকালিপুর এলাকা। এখানেই রয়েছেন দেবী গুহ্য কালী। এই পবিত্র তীর্থস্থান সম্পর্কে খুব কম লোকই জানেন। এখানে দেবী দ্বিভুজা।
গুহ্যকালী দেবী কালীর এক রূপ। দেবী ভাগবতপুরাণ মতে, তিনি দেবী শতাক্ষীর শরীর থেকে উৎপন্ন অন্যতমা এক শক্তি। গুহ্য শব্দের অর্থ, সাংসারিক গৃহস্থের কাছে যিনি অপ্রকাশিত। তবে, দেবী সাধকগণের আরাধ্যা। এই মন্দিরও সেই ভাবনা থেকেই তৈরি হয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। তার ওপর সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার কালো কষ্টিপাথরের দেবী একটি প্যাঁচালো সাপের বেদীমূলের ওপর পা মুড়ে পদ্মাসনে বসে আছেন।
দেবীর এই সর্পমূলাধার কূলকুণ্ডলিনীর প্রতীক। দেবীর বাম হাত ওপরে। ডানহাত নীচের দিকে। যার সাহায্যে দেবী বর ও অভয় দান করছেন। দেবীর মুখমণ্ডল হাস্যময়। বিরাট জিহ্বা আর দাঁত বের করে আছেন। দেবীর গলায় নাগহার রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ৫০টি নরমুণ্ড মালারূপী বর্ণমালা। দেবীর কাঁধে নাগযজ্ঞ উপবীত। মাথায় জটা ও অর্ধচন্দ্র। কোমরে নাগকোটিবন্ধ। কান থেকে দুটি নরদেহ কাঁধ অবধি নেমে এসেছে। দেবীর বাম কঙ্কণে সর্পরাজ তক্ষক। আবার বাম কঙ্কণ রয়েছে অনন্ত নাগরাজ। দেবীর বামদিকে বৎস্যরূপী শিব।
মাথায় সহস্র ফণার নাগফণা মুকুট। দেবী নবরত্ন ভূষিতা। দেবীর এই রূপ দেখতে হলে, সকাল সাড়ে ১০টায় সময় আসতে হবে। কারণ, ওই সময় দেবীকে স্নান করানো হয়। দেবীর মন্দিরটি রয়েছে নির্জনস্থানে। ব্রাহ্মণী নদীর ধারে মহাশ্মশান। সেখানে আজও রক্ষিত আছে দেবীর বেদীমূল আসন। তার পাশেই অষ্টকুলাকৃতি অতি সাধারণ কিন্তু অনন্য তন্ত্রশাস্ত্র সম্মত মন্দির। দেবীর নিত্যসেবা হয়। দুপুরের ভোগে দেবীকে দেওয়া হয় মাছের টক।
আরও পড়ুন- হঠনাগর মন্দির, যেখানে প্রতিদিনই ভগবানের লীলার সাক্ষী হন অসংখ্য ভক্ত
আশ্বিন মাসে দেবীপক্ষের শুক্লা চতুর্দশী ও মাঘমাসে কৃষ্ণা রটন্তী তিথিতে দেবীর বিশেষ পূজা হয়। এখানে রাতে কোনও পূজা হয় না। যাবতীয় পূজা হয় দিনের বেলায়। পৌষ সংক্রান্তিতে একদিনের মেলা বসে। দেবীর পূজা প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ১১টা ৩০, একবারই হয়। দুপুরে নিত্য ভোগপ্রসাদের ব্যবস্থা আছে। আগে ফোন করে কতজন খাবে, জানিয়ে দিতে হয়।
এই মন্দিরে আসার সবচেয়ে সহজ রাস্তা হল নলহাটি স্টেশনে আসা। সেখান থেকে বহরমপুরের দিকে বাসে চেপে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নগড়া মোড়ে নামা। এই মোড় থেকে টোটো বা ভ্যানে চেপে ডানদিনের গ্রাম দিয়ে গুহ্যকালী মন্দিরের দূরত্ব চার কিলোমিটার। যাওয়ার সময় যে টোটোয় যেতে হবে, ফেরার জন্য সেই টোটোকেই বলে রাখতে হবে। কারণ, গাড়ি তেমন একটা নেই।