বাংলা বরাবরই শক্তি আরাধনার কেন্দ্রভূমি। এখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক যেন ভক্ত আর ভগবান নয়। বরং, পরিবারের একের সঙ্গে অপরের সম্পর্ক। আর, সেটা আজকের নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাংলার জনসাধারণ আর মহাশক্তিধর ঈশ্বরের সম্পর্ক এমনই থেকেছে। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ চুঁচুড়ার দয়াময়ী কালী মন্দির। এখানকার খড়ুয়াবাজারের নেতাজি সুভাষ রোডের এই মন্দির মোগল জমানা থেকেই জাগ্রত বলে পরিচিত। আজও এখানকার অসংখ্য ভক্তের কাছে এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালী দয়াময়ী রূপেই পূজিতা হন।
দেবী রূপে ভীষণা, করালবদনী। যার মধ্যে এক ভয়াবহতা আছে। পৌনে দুই হাতের কষ্টিপাথরের দেবীমূর্তির জিহ্বা ও গয়না অলঙ্কার দিয়ে তৈরি। ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট আকবরের থেকে এই অঞ্চলের জায়গির পেয়েছিলেন জিতেন রায়। কালীভক্ত জিতেন রায়ই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই মন্দির। কথিত আছে, শুরু থেকেই ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় এই মন্দির জাগ্রত বলে পরিচিতি লাভ করে। যার জেরে এই মন্দিরকে ঘিরে বাড়তে শুরু ভক্তসংখ্যা। সেকথা জানতে পেরে আকবরের শ্যালক তথা বাংলার তৎকালীন মনসবদার মানসিংহও এসেছিলেন এই মন্দিরে। মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় পরবর্তীতে তিনি রাজস্থান থেকে এসে এই মন্দিরে পুজোও দিয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন- গড়িয়ার কাছেই ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির, জাগ্রত দেবীর কৃপায় মেলে ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ
আজও দূর-দূরান্ত থেকে দয়াময়ী কালীবাড়িতে ভিড় করেন ভক্তরা। এই মন্দিরে দেবীর ভোগ সংগ্রহের জন্য ভক্তদের মধ্যে বিপুল চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে এই মন্দিরের ভোগ খেতে ভিড় করেন সমাজের নানাস্তরের বহু ভক্ত। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীর ইচ্ছা না-হলে, এই মন্দির থেকে প্রসাদ পাওয়া যায় না। প্রতি নববর্ষ, কৌশিকী অমাবস্যা ও দীপান্বিতা অমাবস্যায় দয়াময়ী কালীমন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে। এখানকার কালী মন্দির পশ্চিমমুখী। মন্দিরের উত্তরদিকে একসারিতে রয়েছে তিনটি শিব মন্দির। অন্যান্য জায়গার শিবমন্দিরগুলোর চেয়ে এখানকার শিবমন্দিরের স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। আর, সেই স্বাতন্ত্র্য তৈরি করেছে শিবমন্দিরগুলোর গঠনভঙ্গিমা।