Advertisment

আমার দুর্গা: শবনম ব্যানার্জি

নিজের গাঁটের টাকা খরচ করেই শবনম ও তাঁর সহকারীরা পৌঁছে দেন রক্ত। ফেসবুকে এক ক্লিকেই মিলে যাবে শবনমের ফোন নম্বর। আর এক ফোনেই বাঁচতে পারে আপনার প্রিয়জনের জীবনও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

আমার দুর্গা: শবনাম ব্যানার্জি

বিপদে পড়লে ভগবানকে স্মরণ করা আমাদের অভ্যাস। কিন্তু মানুষের মধ্য়েই যে ভগবান বিরাজমান তা শবনমের কাজকর্মেই স্পষ্ট। কে এই শবনম? কী ভাবে থাকেন মানুষের পাশে?  মরণাপন্ন রোগীর যখন রক্তের প্রয়োজন হয় তখন শবনম ও তাঁর বন্ধুরা কোনো দিকে না তাকিয়ে লেগে পড়েন রক্তের খোঁজে। যে ভাবেই হোক সেই রক্ত জোগাড় করবেই তারা। এক্ষেত্রে রোগীর পরিচিয় নিয়ে না ভাবলেও রক্তের প্রয়োজনীয়তার সত্যতা যাচাই করে নেয় শুধু। এই বিশাল  কর্মকাণ্ডে এক পয়সারও কিন্তু লেনদেন হয় না। ফেসবুকে এক ক্লিকেই মিলে যাবে শবনমের ফোন নম্বর। আর এক ফোনেই বাঁচতে পারে আপনার প্রিয়জনের জীবনও।

Advertisment

বছর দুই আগে বন্ধুর বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখন বেশ কয়েক বোতল রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। চলছিল কেমো সঙ্গে বিএমটি। কোথায় মিলবে এই রক্ত তাই নিয়ে চিন্তায় ছিল ওই পরিবার। বিষয়টি জানতে পারে শবনম। কি ভাবে রক্ত সংগ্রহ করা যাবে ভাবতে থাকেন শাবনম নিজেও। এরপর বন্ধুদের নিয়েই তৈরি করে ফেলেন "ব্লাড মেটস"। সংগঠনের সেই যাত্রা শুরু। রক্তের প্রয়োজন পড়লে সংশ্লিষ্ট পরিবারের মানসিক উদ্বেগ কোথায় পৌঁছতে পারে, তা দেখেছেন শবনম। তাই রক্তের প্রয়োজন পড়লেই ওঁদের একমাত্র কাজ যে ভাবে হোক তা সংগ্রহ করা। একটা মানুষের প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই ব্লাডমেটসের লক্ষ্য। সঙ্গে খেয়াল রাখেন অহেতুক রক্তের অপচয় যেন না হয়।

আরও পড়ুন: আমার দুর্গা: দ্য উইনার্স

রক্তের প্রয়োজনে এ ওর জন্য ঝাপিয়ে পড়া এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর বছর দুয়েক আগেই মনে হয়েছিল, এমন এক মাধ্যম হয়ে উঠতে হবে, যাকে ভর করে সাধারণ মানুষ দুঃসময়ে সহজেই রক্তের যোগান পেয়ে যাবে। অসুর কে বধ করার জন্য দুর্গাকে অস্ত্র দিয়েছিলেন অন্য দেবতারা। ঠিক একই ভাবে শবনমদের সঙ্গে ছিল 'দুঃসময়ের বন্ধু'রা। পথ চলার শুরু  থেকে আজ অবধি যতবার প্রতিকূলতার মধ্য়ে দিয়ে যেতে হয়েছে ব্লাডমেটসকে, পাশে পেয়েছেন রক্তের বাঁধনে বাঁধা পড়া সহযোদ্ধাদের ।

শুরুটা কী ভাবে ? এই প্রশ্নে শবনম ব্যানার্জি জানান, ফেসবুকে সময় কাটাই সকলে। তাই ফেসবুককে হাতিয়ার করেই প্রথমে এগিয়ে যাওয়া। তিন চারজন বন্ধু মিলে ফেসবুকে পরিচিতদের কাছ থেকে রক্ত দান করা আবেদন জানাই। তাতে ভালো সাড়া পাই। তারপর থেকে যোগাযোগ সবটাই কখনও  ফেসবুক মারফত, কখনও ব্লাড ব্যাঙ্ক বা হাসপাতাল সূত্রেই হয়েছে। "আমরা নিজেদের বিজ্ঞাপন করি না। প্রয়োজনে পাশে থাকার চেষ্টা করি"।

বিভিন্ন হাসপাতাল-নার্সিং হোম ঘুরে শবনম আর ওর সঙ্গীরা দেখেছেন বহু মানুষ আছেন যাদের প্রত্যেক দিন প্রায় ১০০ ইউনিট বা ৮০ ইউনিট করে রক্ত লাগে। নেগেটিভ আরএইচ ফ্যাক্টরের রক্ত পেতে সমস্যাও হয়। তার ওপর 'রক্ত-ব্যবসা'য় আবার  দালালদের প্রভাব-প্রতিপত্তি খুব।  ব্লাড ব্যাঙ্কেও মেলে না সেই মূল্যবান রক্ত। এক দিকে রোগীকে নিয়ে পরিবারের নাজেহাল অবস্থা অন্যদিকে প্রয়োজনীয় রক্তের খোঁজ করা। এই সবকিছুর জন্য ডাক্তার আবার সময়ও বেঁধে দেন কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে। কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে অনেক সময়েই আবার নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে রোগীর রক্তের গ্রুপ মিলে গেলেও রক্ত দিতে অস্বীকার করেন আত্মীয়। এরকম হাজারো সমস্যা পেরিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোগীর শেষ ভরসা হয়ে পাশে দাঁড়ান শবনমেরা। শবনম আর ওঁর ব্লাডমেটস-কে দেখেছেন, ওদের কথা জেনেছেন, দরকারে দিনরাত পাশে পেয়েছেন যারা ,তাঁদের কাছে এতদিনে বদলে গেছে 'রক্তের সম্পর্ক'-এর সংজ্ঞাটা।

Durga Puja 2019
Advertisment