ইতিহাস বলে বাংলার বারো ভুঁইয়াদের দমন করতে মহারাজা মান সিংহকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর। সম্রাটের নির্দেশে সেনা নিয়ে বাংলায় এসেছিলেন মানসিংহ। এই সময় তিনি আমডাঙা কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। বারো ভুঁইয়াদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলেন যশোহরের রাজা প্রতাপাদিত্য। মানসিংহ দায়িত্ব নেওয়ার আগে সম্রাট আকবরের সৈন্যবাহিনী দু’বার রাজা প্রতাপাদিত্যের কাছে পরাজিত হয়।
মানসিংহ জানতে পারেন, যশোরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে যুদ্ধযাত্রা করেন প্রতাপাদিত্য। সেকথা কানে আসার পর যশোরেশ্বরীর বিগ্রহটি চুরি করান মানসিংহ। এই খবর কানে পৌঁছতেই মন্দিরের পূজারি রামানন্দ গিরি গোস্বামীকে নির্বাসিত করেন প্রতাপাদিত্য। আর, প্রতাপাদিত্যকে হারিয়ে রাজস্থানের অম্বরে যশোরেশ্বরী মূর্তিটি নিয়ে যান মানসিংহ।
এর মধ্যেই নির্বাসিত পূজারি আমডাঙার শুখাবতী (সুটি) নদীর ধারে জঙ্গলে এসে উপস্থিত হন। আর, মান সিংহ দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে দেবী মানসিংহকে জানান, ভক্ত রামানন্দ উন্মাদ অবস্থায় সুটি নদীর তীরে পড়ে রয়েছেন। সেই স্বপ্ন দেখে সৈন্য পাঠিয়ে রামানন্দকে উদ্ধার করেন মানসিংহ। তাঁকে উন্মাদ অবস্থা থেকে সাধন মার্গে ফিরিয়ে আনতে কষ্টিপাথর দিয়ে কালীর শান্ত মূর্তি নির্মাণও করান আকবরের সেনাপতি। ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে বিগ্রহ তৈরি হওয়ার পর সূচনা হয় আমডাঙা কালী মন্দিরে পুজোপাঠের।
আরও পড়ুন- বড়বাজারের পুঁটেকালী মন্দির, বাঙালিদের মত অবাঙালিরাও যান মনস্কামনা পূরণের জন্য
কথিত আছে, গোড়া থেকেই এই মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত। ভক্তদের মনস্কামনা পূরণের অন্যতম ঠিকানা। পরবর্তী সময়ে ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার কলকাতা অভিযানের সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় তিনিও আমডাঙায় কালীমূর্তির কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। তাঁর সেই মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় খুশি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই মন্দিরকে প্রায় ৩৬৫ বিঘা জমি দান করেছেন।
৪৫০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই কালী মন্দিরে আজও মনস্কামনা পূরণের জন্য আসেন দূর-দূরান্তের মানুষ। কালীপুজোয় সময় ভক্তের সংখ্যা বাড়ে কয়েক গুণ। এখানে দেবীর মূর্তি শান্ত। এই জাগ্রত মন্দির ঘিরে ১৫টি শিব মন্দির রয়েছে। মন্দিরের মহন্তরা মারা যাওয়ার পর, তাঁদের সমাধিস্থলের ওপর গড়ে উঠেছে শিবমন্দিরগুলো। এমনই দাবি ভক্তদের।