Advertisment

ইংরেজ নয়, আর্মেনিয়ান চার্চের মাধ্যমেই খ্রিস্টানদের আগমনবার্তা শুনেছিল কলকাতা

ভারতের সঙ্গে আর্মেনিয়ার ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্য চলত। পূর্ব ভারতে তাঁরা বন্দর শহর কলকাতাকে ঘাঁটি বানিয়েছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Armenian Church

কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন আর্মেনিয়ানরা। সতেরোশো শতাব্দীর গোড়ার দিকে তাঁরা কলকাতায় এসেছিলেন। ভারতের সঙ্গে আর্মেনিয়ানদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। পার্সিয়া, আফগানিস্তান, তিব্বতের পথে সেই বাণিজ্য চলত। আর, তাদের হাত ধরেই ভারতে খ্রিস্টধর্মের প্রবেশও ঘটেছিল। ভারতের অন্যান্য প্রান্তের মত কলকাতায় আসা আর্মেনিয়ানরাও ছিলেন ব্যবসায়ী। ফলে, এখানে তাঁদের সম্পত্তির বিস্তার ঘটাতে অসুবিধা হয়নি। কলকাতায় তাঁরা গড়ে তুলেছিলেন বাড়ি, চ্যাপেল এমনকী স্কুলও।

Advertisment

পরবর্তী সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গেও তাদের বাণিজ্য চলত। এমনকী, ১৬৮৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতার আর্মেনিয়ানদের জন্য ছোট কাঠের গির্জাও বানিয়ে দিয়েছিল। ১৭০৭ সালে সেটি পুড়ে যায়। এরপর ১৭২৪ সালে আর্মেনিয়ান আগা জ্যাকব নাজারের উদ্যোগে তৈরি হয় বর্তমান, 'আর্মেনিয়ান হোলি চার্চ অফ নাজারেথ'। ১৭৩৪ সালে কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত আর্মেনিয়ান পরিবার হাজারমলরা তৈরি করান ক্লক টাওয়ার-সহ গির্জার ঘণ্টা ঘর। গির্জার সংলগ্ন জমিতে আমেনিয়ানদের সমাধিও আছে। এই জমি ১৭২৪ সালের আগে পর্যন্ত সমাধিক্ষেত্র হিসেবেই ব্যবহার হত।

সেই জমিও এক আর্মেনিয়ানই দিয়েছিলেন। তাঁর নাম কেনানেনটেক ফানুস। গির্জাটি তৈরির স্থপতি ছিলেন ইরানের বাসিন্দা গ্যাভন্ড। ইনটেরিয়র ডিজাইনের কাজ করেছিলেন ক্যাটচিক আরাকিয়েল। গির্জার বাইরের ঘণ্টা ঘরের ঘড়িটিও তিনিই দান করেছিলেন। কলকাতার বিখ্যাত গ্র্যান্ড হোটেলের মালিক ও প্রতিষ্ঠাতা অ্যারাটুন স্টিফেন মূল চার্চের বাইরের অংশের বাড়িগুলো জন্য অর্থ দান করেছেন। এই গির্জার মূল ফটকে প্রাচীন আর্মেনিয়ান হরফে লেখা আছে, 'পবিত্র মা ন্যাজারেথ সন্তানদের স্তন্যদুগ্ধে লালন করার জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।'

আরও পড়ুন- বাংলার গির্জা মন্দির, ফাদারের কাছে যা ‘আওয়ার লেডি অফ গুয়াডালুপ’

১৭৯০ সালের পর চার্চের অভ্যন্তরীণ সজ্জার কিছু পরিবর্তন করা হয়। ১৯০০ সালে নিউ জুলফার অ্যারাফুন স্টিফেন তাঁর মা-বাবা স্টেফান, হান্না ও ভাই মার্টিরোজের স্মৃতিতে চার্চের মেঝে সাদা-কালো মার্বেল পাথরে ঢেকে দেন। ১৯০১ সালের জুলাই মাসে কারাপিয়েট বালথাজার ও হোসান্না বালথাজারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাঁদের সন্তানরা চার্চকে 'হোলি ট্রিনিটি', 'লাস্ট সাপার' এবং 'দ্য এনশ্রাউডিং অব আওয়ার লর্ড' ছবিগুলো দান করেছিলেন। ১৯২৭ সালে অ্যারাটুন স্টিফেন ৬৬ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর দেহও এই চার্চের প্রাঙ্গণেই সমাধিস্থ করা হয়।

Britain Armenian Church church
Advertisment