অমিয়ভূষণ পেশাগত ভাবে চিত্রশিল্পী ছিলেন না কখনই। তবে, সমাদৃত হবে না জেনেও শিল্পী যেমন সৃষ্টি করে যান, নিজের খুশিতেই এঁকে যেতেন 'গড় শ্রীখণ্ড', 'চাঁদবেনে'র ঔপন্যাসিক।
“বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে গড়িয়ে গিয়ে যে বাড়তি রঙ আমার চোখে পড়ে , কখনও কখনও তাকে ধরে রাখতে ইচ্ছে করে”।
“…যখন খুব কষ্ট হয়, লিখতে গেলে ভাবতে হয় তো, গঙ্গার একটা জলকণা আঁকলেই তো হয় না, তার প্রবাহটাকেও ধরতে হয়”। এই ‘প্রবাহটাকে ধরার জন্য যে মানুষটা কলমের ক্লান্তি ভুলতে তুলি ধরলেন, তিনি অমিয়ভূষণ মজুমদার। বাংলার পাঠককূল তাঁকে চিনেছে সাদা পাতার কালো হরফেই। যদিও লেখক বলতেন, “লিখবার সময় আমি রঙের মধ্যেই থাকি”। এ হেন অমিয়ভূষণের আঁকা ছবি নিয়ে গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শনশালায় চলছে এক প্রদর্শনী।
অমিয়ভূষণ পেশাগত ভাবে চিত্রশিল্পী ছিলেন না কখনই। তবে, সমাদৃত হবে না জেনেও শিল্পী যেমন সৃষ্টি করে যান, নিজের খুশিতেই এঁকে যেতেন ‘গড় শ্রীখণ্ড’, ‘চাঁদবেনে’র ঔপন্যাসিক। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আঁচড় কাটতেন পাতায় পাতায়। কেউ কোনোদিন দেখবে না জেনেও ছবি আঁকার অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক লিখেছিলেন, “আমার যে উপন্যাস ছাপা হবে না, তা লিখতেও এমন অনুভূতি হয়”।
কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে ৬০ বছর বয়সে প্রথম তুলি ধরলেন লেখক। তারপর যখনই মনে হয়েছে কলম সবটুকু বলে উঠতে পারবে না, তুলিই হয়ে উঠেছে বাঙময়। তাসিলার মেয়র উপন্যাসের জন্য আঁকা বেশ কিছু ছবিই রয়েছে প্রদর্শনীতে।
লেখকের ছেলে অপূর্বজ্যোতি মজুমদার জানালেন, “বাবার আঁকায় কোনো একজন শিল্পী কিমবা পার্সপেক্টিভের ছায়া খুঁজে পাওয়া যায় না। একেকটা ছবিতে রঙ বেশি চাপা, অনেকটা গগার মতো। আবার মেয়েদের ধান কাটার ছবিগুলোতে অবনীন্দ্রনাথের ধাঁচ আসে। কিন্তু বাবা ওয়াশের কৌশলটাই জানতেন না। তাই নির্দিষ্ট কোনও শিল্পীর ছায়া খোঁজার চেষ্টা করলে উত্তর পাওয়া কঠিন হবে। বাবা নিজে বিশ্বাস করতেন, চিত্রির ছবিতে চিমনির কালো ধোঁয়াও সুন্দর। যারা ছবিটা দেখছেন, তাঁদের মধ্যে যে বোধটা তৈরি হচ্ছে সেটা ধরার চেষ্টা করুন। ওটাই আসল”।