পুণ্যতোয়া ভাগীরথী। বয়ে চলেছে নিজস্ব ছন্দে। নদীর পাড়ে বাঁধানো ঘাট। কালনার লক্ষ্ণণপাড়া ঘাট থেকে খুব একটা বেশি দূরে নয়। তবে ঘাটের কারণে না। মন্দিরশহর কালনার লক্ষ্মণপাড়া অন্য এক কারণে বিখ্যাত। সেই কারণ হল, বড়কালী বা আশাদেবীকালীর আরাধনা। যে দেবীর কাছে বিশেষ আশা নিয়ে গেলে মনস্কামনা পূরণ হয়। আর, তাই থেকেই দেবীর নাম আশাদেবীকালী। দেবীর উচ্চতা স্থানীয় অন্যান্য প্রতিমার চেয়ে বেশি। সেই জন্য লক্ষ্মণপাড়ার দেবী বড়কালী নামেও বাসিন্দাদের কাছে পরিচিত। যেখানে দেবীর আরাধনা হয়, সেই অঞ্চলকে লক্ষ্ণণপাড়ার বদলে অনেকে বড়কালীতলা বলে ডাকেন।
আশাদেবী কালীর অলৌকিক কার্যকলাপ গোড়া থেকেই কালনাবাসীর নজর কেড়েছে। কথিত আছে দেবী এখানে মধ্যরাতে নূপুর পরে ঘুরে বেড়ান। সেই কারণে, দেবী মূর্তিকে সোনার নূপুর পরানো হয়। সেবায়েত ভট্টাচার্য পরিবারের কেউ এই কারণেই নূপুর পরেনও না। কাউকে নূপুর উপহারও দেন না। কী তাঁকে ভোগ দেওয়া হবে, সেটাও নাকি স্বপ্নাদেশের মাধ্যমেই বলে দিয়েছিলেন আশাদেবীকালী। তাঁর বৈচিত্র্যময় ভোগের মধ্যে রয়েছে- বেসন দিয়ে ভাজা সিদ্ধ চিংড়ি, খিচুড়ি, পুষ্পান্ন বা ফ্রায়েড রাইস, নয় রকম ভাজা, দুই রকম তরকারি, মাছ, মিষ্টান্ন।
আরও পড়ুন- দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মনস্কামনা পূরণ অথবা সন্তানলাভ, সবই সম্ভব ময়দাকালীর কৃপায়
এই দেবীর উচ্চতা নিয়েও রয়েছে এক অলৌকিক কাহিনি। বড়কালীতলার আশাদেবীকালীর উচ্চতা বরাবরই হয় ১১ ফুট। ব্রিটিশ জমানায় নিরঞ্জনের সময় প্রতিমার উচ্চতা মাপা হত। একবার, অন্য এক পরিবার কালীপুজোয় বড়কালীতলার আশাদেবীকালীর চেয়ে বেশি উচ্চতার কালীমূর্তি তৈরি করেছিল। নিরঞ্জনের সময় দেখা যায়, বড়কালীতলার প্রতিমার চেয়ে সেই প্রতিমার উচ্চতা কমে গিয়েছে।
অতীতে এই এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা। হিংস্র বন্য জন্তুর থেকে বাঁচতে দুটি মশাল জ্বালিয়ে রাখা হত। আজও সেই রীতি মানে এই পুজো। ঐতিহ্য মেনেই ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। রীতি মেনে এই পুজোয় দু'জোড়া ঢাক বাজানো হয়। রথের দিন সিঁদুর দান ও পাটা পুজোর পর শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণের কাজ।