Advertisment

ব্যথাহীন জীবনের আখ্যান ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের

বছর পাঁচেক আগে প্রথম চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, ক্যামেরনের শরীরে এমন কিছু আছে, যা আর কারোর নেই। হাতের একটা অপারেশনের পর জো -এর চিকিৎসকেরা দেখলেন তাঁর হাতে তেমন ব্যথা হচ্ছে না। পেইন কিলার চাইছেন না জো। 

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

জো ক্যামেরন

প্রসব যন্ত্রণাতেও এতটুকু বিচলিত হননি মানুষটা। সেই সময়টা মনে করলে এখন বলেন, "আমি বুঝতাম, আমার শরীরে কিছু একটা বদল আসছে, কিন্তু ব্যথা হতো না তো"। পরে হবু মায়েদের সাহস দিয়ে বেড়াতেন, "ভয় পেও না। সবাই যেমন বলে, অত কিছু না"। মা হওয়ার পর চল্লিশ বছর কেটে গেছে। সদ্য জো ক্যামেরন জানতে পারলেন, ব্যাপারটা আসলে 'অত কিছু'ই, একটুও বাড়িয়ে বলতেন না মায়েরা।

Advertisment

জো ক্যমেরন। বয়স ৭১। সদ্য গবেষকরা জানতে পেরেছেন জো এর শরীরটাই অন্যরকম। আর পাঁচজনের থেকে আলাদা। ব্যথার বোধটাই চিরকাল কম ছিল জো-এর মধ্যে।

'ব্রিটিশ জার্নাল অব অ্যানাস্থেশিয়া'তে প্রকাশিত গবেষণা বলছে জো-এর শরীরে একধরণের পরিব্যক্তি বা মিউটেশন হয়ে গিয়েছে। এর আগে এই জিনকে চিহ্নিত করা যায়নি। শরীরে সেই জিন চলে আসার ফলে সারা জীবনে কোনও রকম ব্যথাই অনুভব করেননি জো ক্যামেরন। এবার চিকিৎসক এবং গবেষকরা মানবদেহের ব্যথা নিরাময়ের কাজে ব্যবহার করতে চাইছেন জো এর শরীরের এই জিনকে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের গবেষক জন উড বললেন, "আমরা এ ধরণের কেস আগে কখনও দেখিনি। গত ১০০ বছর ধরে জিনগত পরিব্যক্তি নিয়ে নানা রকম কেস নথিভুক্ত হয়েছে, কিন্তু এটা হয়নি"।

আরও পড়ুন, দিন বদলের স্বপ্ন নিয়ে দু’চাকায় অক্ষয়যাত্রা

বছর পাঁচেক আগে প্রথম চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, ক্যামেরনের শরীরে এমন কিছু আছে, যা আর কারোর নেই। স্কটল্যান্ডে লচ নেস নদির ধারে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন জো। হাতের একটা অপারেশনের পর জো -এর চিকিৎসকেরা দেখলেন তাঁর হাতে তেমন ব্যথা হচ্ছে না। পেইন কিলার চাইছেন না জো।

"আমি বলেছিলাম, আমার কোনও পেইন কিলার লাগবে না", জানালেন ক্যামেরন। ৬৫ বছর বয়সে ক্যামেরনের হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি হয়। শরীরে কোনও রকম ব্যথা অনুভব না করায় ক্যামেরন বুঝতেই পারেননি কোমরের হাড় ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছে। কাটা, পোড়া, ছড়ে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া, কিছুই অনুভব করতে পারেন না ক্যামেরন। আশ্চর্য ব্যাপার, হরদম কেটে ছড়ে যায় ক্যামেরনের, কিন্তু দাগও মিলিয়ে যায় সহজেই। তিনি, নিজে  এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকত্ব দেখতে পাননি। চিকিৎসকেরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, এই দাগ মিলিয়ে যাওয়ার পেছনেও রয়েছে জিনগত পরিব্যক্তি।

ক্রমশ চিকিৎসক গবেষকদের আগ্রহ দেখে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন ক্যামেরন। একাধিক লেখা পড়ে জানতে পারেন অনেক অভিভাবকেরা খেয়াল করেছেন, তাঁদের সন্তানরা ব্যথা অনুভব করতে পারেন না, তাই সম্ভাব্য বিপদ থেকে সতর্ক হতেও শেখে না তারা।

Advertisment