মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন। তিনি ভারতের একের পর এক মন্দির ধ্বংস করেছেন। শুধু তাই নয়, কাশী বিশ্বনাথ থেকে সোমনাথ মন্দির তিনি লুঠ করেছেন। অপবিত্র করারও চেষ্টা করেছেন। এমন অভিযোগ ইতিহাসবিদদের একাংশ করেছেন। সেনিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু, সেসব অন্য প্রসঙ্গ। ইতিহাসের পাতায় সেভাবে না-পাওয়া গেলেও, ভারতেরই এক মন্দিরের ভক্তদের দাবি, সেখানেও হামলা চালিয়েছিলেন ঔরঙ্গজেব। কিন্তু, সেই মন্দির ভাঙতে এসে নাকি ভয়ের চোটে অজ্ঞানই হয়ে যান প্রবল প্রতাপশালী মোগল সম্রাট।
কথিত আছে এই মন্দিরের সূত্রপাত হয়েছিল প্রায় হাজার বছর আগে। কাকতীয় বংশের রাজা প্রতাপরুদ্র পরিচিত ছিলেন দ্বিতীয় রুদ্রদেব নামে। শোনা যায়, রাজা একবার ঘন জঙ্গলে শিকার করতে গিয়েছিলেন। মহলে ফিরতে তাঁর রাত হয়ে গিয়েছিল। ক্লান্তির কারণেই রাজা ওই ঘন জঙ্গলে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ক্লান্ত রাজা শুয়ে পড়েছিলেন একটি গাছের নীচে। মধ্যরাতে সেই জঙ্গলের ভিতর থেকে রাম নাম শুনতে পেয়েছিলেন রাজা। যা শুনে ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন রাজা প্রতাপরুদ্র। তিনি দেখতে পান, জঙ্গলের ভিতরে কেউ রাম নাম করছে। যা শুনে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
আশপাশে খোঁজ করার পর রাজা দেখতে পান ভগবান হনুমানের একটি মূর্তি, যেন তা ধ্যান করছে। এই মূর্তির চারপাশে যেন আলো ঠিকরে বের হচ্ছিল। রাজা বুঝতে পারেন, রাম নাম জপের আওয়াজ ওই মূর্তির ভিতর থেকে আসছে। রাজা এমন আজব ব্যাপার দেখে চমকে ওঠেন আর চিন্তিত হয়ে পড়েন। মূর্তি কি আদৌ রাম নাম জপ করতে পারে? সেই সন্দেহ নিরসনের জন্য রাজা ওই মূর্তির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রাজার মনে হয়, সেটা কোনও মূর্তি নয়। স্বয়ং হনুমানই রামের নাম জপ করছেন। যা দেখে রাজা তখনই ওই মূর্তিটিকে প্রণাম করেন। তারপর ক্লান্তি আসায় তিনি ঘুমোতে চলে যান।
কথিত আছে ঘুমের মধ্যে রাজাকে স্বপ্নে দর্শন দেন স্বয়ং হনুমান। স্বপ্নে তিনি ওই স্থানে মন্দির বানানোর কথা রাজাকে বলেন। স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় রাজার। তিনি তাঁর রাজ্যের দিকে রওনা দেন। রাজ্যে ফিরে রাজা তাঁর স্বপ্নের কথা মন্ত্রী-সহ অন্যান্যদের বলেন। যা শুনে মন্ত্রী ও সভাসদরা রাজাকে হনুমানের মন্দির বানানোর পরামর্শ দেন। এরপর যে জায়গায় রাজা হনুমানের মূর্তির দর্শন পেয়েছিলেন, জঙ্গলের সেই স্থানেই শুরু হয় মন্দির নির্মাণের কাজ। মন্দির তৈরি হলে, নামকরণ করা হয়- 'ধ্যান অঞ্জনীয়াস্বামী মন্দির'। ধীরে ধীরে এই মন্দিরের কথা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার ভক্ত এই মন্দিরে যাতায়াত শুরু করেন।
এই সব ঘটনার প্রায় ৫০০ বছর পর মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে গোলকুন্ডা কেল্লা দখল করেন। এরপর তিনি সেখানকার মন্দিরগুলো ভেঙে ফেলার অভিযান শুরু করেন। আর, এই উদ্দেশ্যেই ঔরঙ্গজেব গিয়ে পৌঁছন হায়দরাবাদের সেই বিখ্যাত ধ্যান অঞ্জনীয়াস্বামী মন্দিরে। ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে তাঁর সেনা ও সেনাপতিরা এই মন্দির ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাঁরাও ব্যর্থ হন। উলটে বাদশার কিছু সেনা নাকি মন্দির চত্বরে প্রবেশ করামাত্রই পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। এসব শুনে ঔরঙ্গজেব নিজে ওই মন্দির ভাঙতে যান। কিন্তু, তিনি মন্দিরের কাছে যেতেই ভিতর থেকে প্রকাণ্ড গর্জন শোনা যায়।
আরও পড়ুন- আকবরের সেনাপতি মানসিংহ এসেছিলেন এই মন্দিরে, জাগ্রত দেবী পূরণ করেন মনস্কামনা
সেই তীব্র আওয়াজ সহ্য করতে পারেননি মোগল বাদশা। তার মধ্যেই ভিতর থেকে ভয়ংকর তীব্র শব্দে কে যেন বলে ওঠেন, 'বাদশা যদি মন্দির ভাঙতে চা-ও, তবে মন শক্ত কর।' এসব শুনে ঔরঙ্গজেব ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। কথিত আছে, এরপর বেহুঁশ ঔরঙ্গজেবকে তাঁর সৈনিকরা তুলে কেল্লায় নিয়ে যান। তার পর থেকে এই মন্দিরের নামকরণ হয় 'মন শক্ত কর' বা করমনঘট মন্দির। ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরের সন্তান প্রার্থনা করলে দ্রুত সন্তানলাভ হয়। পাশাপাশি, রোগীদের জন্য প্রার্থনা করলে, তাঁরা খুব দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। আর প্রার্থনা করলে, শীঘ্রই পূরণ হয় মনস্কামনা।