কাটোয়া থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে বর্ধমানের কেতুগ্রাম। রাজা চন্দ্রকেতুর নাম অনুসারে এই জায়গার নাম হয়েছিল। এখানকার অন্যতম জায়গা বহুলা বা প্রাচীন মতে বহুলাপুর। সেখানেই রয়েছে বাংলার অন্যতম সতীপীঠ। যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী বাহুলাক্ষী। তন্ত্রচূড়ামণি-সহ বিভিন্ন গ্রন্থ অনুযায়ী, এখানে দেবী সতীর বাম বাহু পড়েছিল। সেই থেকে এই সতীপীঠের নাম বাহুলাক্ষী। অনেকে যাকে ডাকেন বহুলা সতীপীঠ নামে। কথিত আছে, 'বহুলায়াং বামবাহু বহুলাখ্যাচ দেবতা, ভীরুকঃ ভৈরবস্তোত্র সর্ব্বসিদ্ধি প্রদায়ক।'
এখানে দেবীর ভৈরব হলেন ভীরুকঃ। যার অর্থ যিনি ধ্যানের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়েছেন। অথবা, সর্বোচ্চ সিদ্ধি অর্জন করেছেন। তিনি এই মন্দিরে দেবীর সঙ্গেই রয়েছে। আবার ভক্তদের একাংশের দাবি, কাটোয়া থেকে কিছুদূরে শ্রীখণ্ড নামে এক জায়গায় রয়েছে মহাদেবের মন্দির। তিনি সেখানে ভূতনাথ নামে পরিচিত। সেই ভূতনাথই হলেন দেবী বাহুলাক্ষীর ভৈরব। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা দেবীর মন্দির। যার গর্ভগৃহের সামনে রয়েছে বড় আকারের উঠোন। যার লাগোয়া বলিদানের জায়গা। যার কয়েক হাত দূরেই রয়েছে নাটমন্দির। যেখানে ভক্তদের ভোগ পরিবেশন করা হয়।
নাটমন্দিরের পিছনেও আবার বলিদানের আরেকটি হাঁড়িকাঠ আছে। মন্দিরের লাগোয়া ভোগপুকুর। দেবীর সঙ্গেই আছে গণেশের মূর্তিও। কথিত আছে, দেবীর কষ্টিপাথরের মূর্তিটি যে পুকুর থেকে পাওয়া গিয়েছিল, সেই পুকুর থেকেই উদ্ধার হয়েছিল গণেশের মূর্তিটিও। এই মন্দিরে গণেশের মূর্তিটিকে হেরম্ব গণেশরূপে পুজো করা হয়। বহুলা গ্রাম থেকে কিছু দূরে রয়েছে ঈশানী নদী। তার কাছে রয়েছে একটি প্রাচীন মন্দির। ভক্তদের একাংশের দাবি, ওই প্রাচীন মন্দিরেই আগে দেবী বাহুলাক্ষীর অধিষ্ঠান ছিল।
ভক্তদের একাংশ আবার দেবী বাহুলাক্ষীকে দেবী চণ্ডীদাসের বর্ণনা অনুযায়ী দেবী ধূমাবতী বলে মনে করেন। গবেষকদের একাংশের আবার দাবি, রাজা চন্দ্রকেতু বা তাঁর পরিবারের কেউ তান্ত্রিকমতে উপাসনা করতেন। তিনি অথবা তাঁর পরিবারের ওই সদস্য এই মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। এখানে ভক্তদের জন্য আছে ভোগের ব্যবস্থা। নাটমন্দিরে বসিয়ে ভক্তদের ভোগ খাওয়ানো হয়। ভোগপিছু নেওয়া হয় ৬০ টাকা করে।