বাঙালির কাছে বৈদ্যনাথনাম। অবাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ এই তীর্থস্থানকে ডাকেন 'বাবাধাম' নামে। যেখানে সারা বছর ধরেই অসংখ্য পুণ্যার্থী ভিড় করেন। শিবলিঙ্গে জল ও পুজো দেন। দেওঘর জেলার দেওঘর শহরে এই বৈদ্যনাথধাম। যেখানে মহাদেব অবতীর্ণ হয়েছিলেন বৈদ্য বা চিকিৎসকের ভূমিকায়। তিনি এখানে এসে রাবণকে সুস্থ করে তুলেছিলেন। শিবপুরাণের কোটিরুদ্র সংহিতায় বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ সম্পর্কে বলা আছে, 'বৈদ্যনাথং চিতাভূমৌ'। প্রাচীনকালে বৈদ্যনাথ মন্দিরের কাছে একটি শ্মশান ছিল। সেই কারণে একথা বলা হয়েছে বলেই মনে করেন শাস্ত্রজ্ঞরা। হিন্দু শাস্ত্রমতে, অরিদ্রা নক্ষত্রের রাতে ভগবান শিব জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
শুধু শিবের জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরই না। বৈদ্যনাথ মন্দিরটি ৫১ শক্তিপীঠেরও অন্যতম। এখানে সতীর হৃদয় পড়েছিল বলেই বিশ্বাস ভক্তদের। সেই কারণে এই অঞ্চলকে হৃদয়পীঠও বলা হয়। এখানে দেবী সতী জয়দুর্গা নামে পরিচিত। দেবীভাগবত পুরাণ, কুব্জিকা তন্ত্র, কালিকারহস্য, মুণ্ডমালা তন্ত্র ও রুদ্রযামলে বৈদ্যনাথধামকে শক্তিপীঠ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তন্ত্রসাধনার ক্ষেত্র হিসেবেও দাবি করা হয়েছে। বৈদ্যনাথ মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বাবা বৈদ্যনাথ টেম্পল ম্যানেজমেন্ট বোর্ড। পিরামিড আকৃতির শিখর বৈদ্যনাথ মন্দিরের। এই মন্দির চত্বরে বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের মন্দির ছাড়াও আরও ২১টি মন্দির আছে।
আরও পড়ুন- দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম, যেখানে শিবের সঙ্গেই ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকেও পুজো করা হয়
এই জ্যোতির্লিঙ্গ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে রাবণের নাম জড়িয়ে আছে। রাবণ লিঙ্গটিকে লঙ্কায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু, দেবতাদের ষড়যন্ত্রে তা আর করে উঠতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত জীবিত থাকাকালীন রাবণ প্রতিদিন লঙ্কা থেকে এসে এই শিবলিঙ্গিটিকে পুজো করে যেতেন। কথিত আছে, রাবণের মৃত্যুর পর জ্যোতির্লিঙ্গটি অযত্নে পড়েছিল। বৈজু নামে এক ব্যাধ লিঙ্গটি দেখতে পান। তিনিই দেবতাজ্ঞানে রোজ লিঙ্গটির পুজো শুরু করেন। সেই থেকেই লিঙ্গটির নাম হয় বৈজুনাথ বা বৈদ্যনাথ। আদি শংকরাচার্যও তাঁর দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ স্তোত্রে বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ করেছেন। তবে অনেকে আবার মহারাষ্ট্রের পারলি ও হিমাচল প্রদেশের বৈজনাথ শিবম্দিরকেও আসল বৈদ্যনাথ ধাম হিসেবে দাবি করে থাকেন।