রাজ্যের আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে পারে। বেকারত্ব থেকে নানা বিষয়ের পিছনে রাজনৈতিক কারণ দায়ী থাকতেই পারে। কিন্তু, শক্তি আরাধনার ক্ষেত্র বাংলা অতীত থেকে আজও শক্তিভূমিই থেকে গিয়েছে। এর বিভিন্ন স্থানের মাহাত্ম্য এবং অলৌকিক ক্ষমতা একচুলও নষ্ট হয়নি। এরাজ্যের আনাচ কানাচে রয়েছে একের পর এক শক্তিপীঠ। আছে অসংখ্য সিদ্ধপীঠ। সেই সব পীঠে সাধনা করে কত সাধক যে সিদ্ধ হয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। যার দৌলতে এই বাংলা আজ হয়ে উঠেছে অলৌকিকত্ব আর সাধনার তীর্থভূমি।
এরাজ্যের এমনই এক তীর্থক্ষেত্রে রয়েছে বাঁকুড়ার বৈতলে। এখানকার উত্তরবাড় মৌজায় রয়েছে দেবী ঝগড়াই চণ্ডীর মন্দির। দেবীকে অনেকে ঝগড়ভঞ্জনীও বলেন। কথিত আছে ৯৬৫ মল্লাব্দ অর্থাৎ ১৬৫৯ সালে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। সেই সময় বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ প্রথম রঘুনাথ সিংহ। মানিক রামের ধর্মমঙ্গল কাব্যে দেবী ঝগড়াই চণ্ডীর কথা বলা আছে। ধর্মমঙ্গলে লেখা আছে, 'ফুলুইয়ের জয়দুর্গা, বৈতলের ঝগড়াই, ক্ষেপুতে খ্যাপাই বন্দি আমতা মেলাই।' মাকড়া পাথরের তৈরি উত্তরদুয়ারি এই মন্দিরের বিগ্রহটি বেলেপাথরের।
এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রত বলেই ভক্তদের বিশ্বাস। আশপাশের সমস্ত গ্রাম থেকে ভক্তরা পুজো দিতে ভিড় করেন এই মন্দিরে। শুধু তাই নয়, দূর-দূরান্ত এমনকী বিভিন্ন জেলা থেকেও এই মন্দিরে ভক্তরা আসেন। রোগজ্বালা নিরাময় থেকে মনস্কামনা পূরণের আশায় বহু ভক্ত এই মন্দিরে দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। আবার ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীর কৃপায় মিটে যায় দাম্পত্য থেকে শুরু করে নানা প্রকার কলহ এবং বিবাদ। দেবীর আশীর্বাদে মামলা-মোকদ্দমাতেও জয়লাভ করা যায় বলেই মনে করেন দেবী ঝগড়াই চণ্ডীর ভক্তরা।
আরও পড়ুন- যে মন্দিরে বাস করেন স্বয়ং শনিদেব, প্রার্থনা জানালেই পূরণ হয় মনস্কামনা
এই মন্দিরে দেবীর নিত্য পূজা হয়। তার মধ্যে শনি ও মঙ্গলবার দেবীর পূজা হয় বেশ ঘটা করে। যাঁদের মানত পূরণ হয়, তাঁরা এই মন্দিরের সামনে ছাগ বলি দেন। আর এই বলি চলে সপ্তাহের শনি এবং মঙ্গলবার। বলির সংখ্যাটাও নেহাত কম না। তবে, মন্দিরে বড় আকারে জাঁকজমক করে পুজো হয় শরৎকালে দুর্গাপুজোর সময়। সেই সময় নিয়ম অনুযায়ী দেবী দুর্গার পুজো হয়। দেবীর স্থায়ী ঘট আছে। তাই আলাদা করে আর ঘটস্থাপনের প্রয়োজন হয় না। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিথির পুজো দেখতে বহু লোকের সমাগম হয় সুপ্রাচীন এই মন্দিরে।