পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে সতীপীঠ। কথিত আছে এখানে দেবীর বাঁ পায়ের গোড়ালি পড়েছিল। দেবীর নাম বর্গভীমা। তাঁর ভৈরব সর্বানন্দ। পীঠনির্ণয় গ্রন্থ অনুযায়ী এই তীর্থক্ষেত্র ৫১ সতীপীঠের প্রথম পীঠ। মন্দিরের উচ্চতা ৬০ ফুট। এখানে ২৬টি সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরে উঠতে হয়।
সামনে নাটমন্দির, নহবতখানা ও বলির জায়গা। কথিত আছে বাংলার ১২৬০ সালে দেউলটি তৈরি করিয়েছিলেন লাহোরের মগলুরিয়া চৌধুরি। এখানে গর্ভগৃহের ভিতরে বেদীর ওপর স্থাপিত দেবী চতুর্ভুজা। দেবীর ওপরের ডানহাতে রয়েছে খড়গ। আর, নীচের ডানহাতে ত্রিশূল। ওপরের বামহাতে রয়েছে খর্পর। আর, নীচের বামহাতে নরমুণ্ড।
তন্ত্রচূড়ামণি গ্রন্থ অনুযায়ী, দেবী বর্গভীমা হলেন কপালিনী। শিবচরিত গ্রন্থের মতে দেবী ভীমরূপা। আর, পীঠমালাতন্ত্র অনুযায়ী দেবী বর্গভীমা কপালিনী ভীমরূপিণী। তাঁর ভৈরব কপালি বা সর্বানন্দ। এখানে প্রতিদিন শোল মাছের ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। পৌষ এবং চৈত্র সংক্রান্তিতে মন্দিরকে কেন্দ্র করে বসে মেলা।
পৌষ সংক্রান্তির দিন দেবী বর্গভীমার বাৎসরিক পুজোর দিন হিসেবে চিহ্নিত। এখানকার দেবীমূর্তির গঠন উগ্রতারা মূর্তির মত। কালো পাথরে তা খোদাই করা। দেবীর ধ্যান ও পূজা যোগিনী মন্ত্র ও নীল তন্ত্রানুসারে জপ করা হয়।
আরও পড়ুন- বাংলারই সতীপীঠ, যেখানে মন্দিরের জন্ম ইতিহাস আজও রহস্যের চাদরে ঢাকা
কথিত আছে, এই মন্দিরের পাশের পুকুরে ডুব দিয়ে পাওয়া যে কোনও বস্তু লাল সুতো দিয়ে মন্দিরের পাশের গাছে বাঁধলে মনস্কামনা পূরণ হয়। তমলুক শহরে আজও কোনও মন্দিরে ঘটস্থাপনের আগে, কোনও শুভকাজের আগে দেবী বর্গভীমার মন্দিরে পুজো দেওয়াই রীতি। দেবীকে নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি।
এখানকার ভক্তরা বিশ্বাস করেন দেবী ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ দেন। এই চারটি বর্গ দান করেন বলেই দেবীর নাম বর্গভীমা। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে। দেবীর কাছে প্রার্থনা করলে বহু অলৌকিক ঘটনারও সাক্ষী থাকা যায়। এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের। কালী ছাড়াও দেবীকে দুর্গা এবং জগদ্ধাত্রী রূপেও পুজো করেন ভক্তরা।