কথিত আছে, রাতে চক্ষুদান করায় অদৃশ্য হাত এসে ধরেছিল শিল্পীর চুলের মুঠি। ভক্তদের বিশ্বাস, ঠিক এতটাই জাগ্রত মানকরের বড়মা কালী। বর্ধমান জেলার অংশ মানকর। এখানে প্রায় ৭০০ বছর আগে কালীপুজো শুরু করেছিলেন রামানন্দ গোস্বামী। ভক্তদের দাবি, রামানন্দ গোস্বামী দেবীর দর্শন পেতেন। সেই সময় যে শ্মশানে তিনি সাধনা করতেন, তা আজ বদলে হয়েছে মানকর ভট্টাচার্য পাড়া। সাধক রামানন্দ গোস্বামীকে তাঁর ইচ্ছানুসারে জীবন্ত সমাধি দিয়েছিলেন ভক্তরা। পরবর্তীকালে এই পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন মানকরের জমিদার বাণীকণ্ঠ ভট্টাচার্য।
কথিত আছে একসময় মন্দিরের পাশ দিয়ে এক শাঁখারি যাচ্ছিলেন। সেই সময় কালোরঙের দেখতে এক বালিকা ছুটে এসে শাঁখা পরতে চেয়েছিল। শাঁখারি দু'হাতে শাঁখা পরাতেই, ওই বালিকা আরও দু'হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। হতভম্ব শাঁখারি সেই দু'হাতেও শাঁখা পরিয়ে টাকা চাইতেই মেয়েটি জানিয়েছিল, মন্দিরের কুলুঙ্গিতে বেলপাতা ঢাকা দু'টাকা রাখা আছে। তাঁর বাবার কাছে গেলেই সেখান থেকে দাম মিটিয়ে দেবেন। শাঁখারি তাঁর কথামত, বাণীকণ্ঠ ভট্টাচার্যের কাছে যান, সমস্তটা জানান। দেখা যায়, মন্দিরের কুলুঙ্গিতে বেলপাতা ঢাকা অবস্থায় ঠিক দু'টাকা রাখা আছে।
বাণীকণ্ঠ ভট্টাচার্য শাঁখারির টাকা সেখান থেকে মেটালেও জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর কোনও মেয়ে নেই। তিনি পালটা ওই শাঁখারিকে বলেছিলেন, যে মেয়েটি শাঁখা পরেছে, তাঁর কাছে নিয়ে যেতে। শাঁখারি যেখানে বসে শাঁখা পরিয়েছিল, সেখানে নিয়ে গেলেও কোনও বালিকাকে দেখা যায়নি। উলটে পাশের পুকুর থেকে নতুন শাঁখা পরা দেবী কালীর চার হাত উঠে এসেছিল শাঁখা পরার প্রমাণ দেখাতে। সেই থেকে ওই শাঁখারি এবং পরবর্তীতে তাঁর বংশধররা এখানে বংশ পরম্পরায় দেবীর পুজোর শাঁখা দান করে আসছেন।
আরও পড়ুন- জাগ্রত দেবতা গোবিন্দ রায় জিউ, যাঁর অলৌকিক অজস্র ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভক্তরাই
রাতে চক্ষুদানের পর অদৃশ্য হাত শিল্পীর চুলের মুঠি ধরার পর থেকে এখানে রাতে দেবীর চক্ষুদান বন্ধ। এই মন্দিরে দুর্গাপুজোর পর ত্রয়োদশীর দিন দেবী কালীর কাঠামোয় মাটি পড়ে। অতীতের রীতি মেনেই হয় যাবতীয় পুজো। এখানকার পুজোয় আট রকমের ডাল আটটি উনুনে সেদ্ধ হয়। একপোয়া চালের অন্নভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। গোবিন্দভোগ চালের পায়েস ও পুকুরের নতুন মাছ দেওয়া হয়। এছাড়াও নৈবেদ্য, কদমাও দেওয়া হয়। পুজোর সময় রাতভর চলে নরনারায়ণ সেবা।